
ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা
ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। শুধু দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী। উদ্বেগ আর আতঙ্ক পেয়ে বসছে সর্বত্র। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট। বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট। যদিও এটি এখনো আশঙ্কার বড় কারণ নয়। প্রতিবেশী ভারতেও কয়েক হাজার রোগী আক্রান্ত হয়েছে করোনায়। এদের মধ্যে আক্রান্ত রয়েছে নতুন ভাইরাসেও। নতুন ধরনের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পার্শ্ববর্তী ভারতসহ কয়েকটি দেশে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সোমবার অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কতা জারি করা হয়।
এতে বলা হয়- পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনার একাধিক সাব-ভেরিয়েন্ট বিশেষ করে অমিক্রনের এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন-১ ও এনবি ১.৮.১ দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এসব ধরন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ভারতসহ আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন ঝুঁকি মোকাবিলায় হেলথ স্ক্রিনিং বাড়ানোসহ বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়। জানা গেছে- ঢাকাসহ দেশব্যাপী আগের তুলনায় পাওয়া যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে-এ মাসের প্রথম ১০ দিনে ৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ জন। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে দেশের প্রধান বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ। জারি করা হচ্ছে নতুন নতুন স্বাস্থ্যবিধি। তবে বিশেষজ্ঞরা এখনই আতঙ্কিত না হয়ে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহারে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা বড় বড় হাসপাতালগুলোত চলছে জোর প্রস্তুতি। গ্রহণ করা হচ্ছে নানা উদ্যোগ।
ইতোমধ্যেই করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার জন্য রি-এজেন্ট হিসেবে কিট সরবরাহ করা হয়েছে। সন্দেহ দেখা দিলেই রোগীরা হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে পারবেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রোগীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রোগী এবং স্বজনদের সচেতন করার জন্য নেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ। করোনা মহামারির বিশেষ চিরচেনা দৃশ্য মাস্ক পরার সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তাঘাটে দেখা মিলছে মাস্ক পরিহিত লোকজনদের। রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে বাড়ছে মাস্ক বিক্রি। হঠাৎ করোনার চোখ রাঙানি সম্পর্কে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এখন এমনিতেই আবহাওয়ার কারণে মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
একইসঙ্গে করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আগের মতো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি যেমন- হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, এগুলো মেনে চললে করোনা থেকে সুরক্ষা থাকা সম্ভব। কারণ করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়েও সচেতন হতে হবে। এক সঙ্গে দুটি ভাইরাসে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সুতরাং, আমাদের প্রতিরোধের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। যাদের অন্যান্য রোগ আছে, তারা করোনা আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক যারা তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিল রোগ আছে, তারা আক্রান্ত হলে জটিলতা তৈরি করতে পারে। এজন্য এখনই সচেতন হতে হবে। এদিকে দেশে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট আশঙ্কার বড় কারণ নয় বলে জানিয়েছে আšতর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)। সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়- বাংলাদেশে ওমিক্রনের দুটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির আবির্ভাব হয়েছে, যা সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এই বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই জেএন.১ গ্রুপের ভ্যারিয়েন্ট এখন বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শনাক্ত করা হয়েছে। এ বছরের মে মাসে কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে অবস্থিত আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স স্টাডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট ৭ শতাংশ ছিল।
আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও আইসিডিডিআর,বি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রতিষ্ঠানটি পরামর্শ হিসেবে দেশবাসীর প্রতি বলেছে, সুরক্ষিত থাকুন, অসুস্থ লাগলে বাড়িতে থাকুন। এ ছাড়া টিকা নিন, বিশেষত যদি বয়স্ক বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক পরুন, নিয়মিত আপনার হাত ধুয়ে নিন বা স্যানিটাইজ করুন। এ বিষয়ে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়- গত চব্বিশ ঘণ্টায় পাঁচ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগের দিন চার জনের নমুনা পরীক্ষায় তিন জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। অর্থাৎ দিনের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ।
গত দুদিনে করোনা থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ছয় জন। তাদের মধ্যে গত ৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে একজনের মৃত্যু হয়। করোনায় মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি পুরুষ। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সংক্রান্ত্র এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- সম্প্রতি পাশের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট বিশেষ করে অমিক্রনে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।