ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

পোপ লিও চতুর্দশকে নাম বাছাইয়ে সাহায্য করল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা! 

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ১১ মে ২০২৫

পোপ লিও চতুর্দশকে নাম বাছাইয়ে সাহায্য করল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা! 

পোপ লিও চতুর্দশ স্বীকার করেছেন, নিজের পোপীয় নাম নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) বড় একটা ভূমিকা ছিল। তবে একই সঙ্গে তিনি এটিও স্পষ্টভাবে বলেছেন এই প্রযুক্তিই এখন মানব মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও শ্রমিক অধিকারের জন্য বড় এক হুমকি হয়ে উঠছে।

নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ভাষণে পোপ জানান, তাঁর ভাবনা ও নাম নির্বাচনের পেছনে AI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে প্রযুক্তির এই অগ্রগতি মানুষকে যেমন সুবিধা দিচ্ছে, তেমনি নতুন ধরনের নৈতিক সংকটও তৈরি করছে।

পোপ লিও চতুর্দশ, যিনি পোপ হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর বিশপ রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্ট ছিলেন, নির্বাচনের মাত্র দুদিন পর কার্ডিনালদের উদ্দেশে বলেন, “আমি লিও চতুর্দশ নামটি নিয়েছি মূলত পোপ লিও ত্রয়োদশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। তিনি ১৮৯১ সালে ‘Rerum Novarum’ পত্রে শিল্প বিপ্লবের সময় শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেছিলেন। আজকের দিনে, আমরা একইরকম এক প্রযুক্তিগত বিপ্লবের মুখোমুখি হয়েছিযার নাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।”

তিনি বলেন, “চার্চ এখন আবারও সবাইকে তার সামাজিক শিক্ষার ধনভাণ্ডার তুলে ধরছে। কারণ আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে—কীভাবে এই এআই যুগে মানব মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও শ্রমিক অধিকার রক্ষা করা যাবে।”

প্রযুক্তির আশীর্বাদ, না অভিশাপ?
গত কয়েক বছর ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে ক্যাথলিক চার্চ। ভ্যাটিকান সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী দলিল প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা, সত্যতা এবং নৈতিক দিক নিয়ে গভীর আলোচনা করা হয়েছে। ওই নথিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে পোপ ফ্রান্সিসের আগের সতর্কবার্তাও।যেখানে তিনি বলেন, AI-র সাহায্যে তৈরি হওয়া ভুল তথ্য বা ভুয়া গল্প সহজেই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

পোপ লিও চতুর্দশ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি এই ব্যাপারে পোপ ফ্রান্সিসের দেখানো পথেই হাঁটবেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ঠিক যেমনভাবে শিল্পবিপ্লবের সময় চার্চ শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, এখন সেই একই আন্তরিকতা ও সাহস নিয়ে চার্চকে এগোতে হবে ডিজিটাল বিপ্লবের যুগে,যেখানে এআই আমাদের নৈতিক মূল্যবোধকে প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

পোপ ফ্রান্সিসের পদাঙ্ক অনুসরণ
২০২৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস নিজেই এআই-চালিত ভুয়া তথ্যের শিকার হয়েছিলেন, যখন তাঁর ডিজাইনার জ্যাকেট পরা একটি মিথ্যা ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তিনি সরাসরি সতর্ক করেন, প্রযুক্তির সাহায্যে বানানো ছবি বা তথ্য ‘সত্যের মতো’ দেখালেও সেগুলো হতে পারে পুরোপুরি ভুল।

এক বছর পর, ভ্যাটিকানে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “ভুয়া কনটেন্ট এমনভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব, যা পুরোপুরি মিথ্যা হলেও সত্য বলে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।”

তাঁর এই চিন্তাধারার পথ ধরেই পোপ লিও চতুর্দশ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চার্চের অবস্থান আরও জোরালো করতে চান। তিনি বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস আমাদের শিখিয়ে গেছেন কীভাবে সরলতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণ করে জীবনযাপন করতে হয়। আমি সেই আদর্শকেই ধারণ করতে চাই। তাঁর উত্তরাধিকার বহন করেই আমরা সামনে এগিয়ে যাব বিশ্বাস ও আশার আলোকে সামনে রেখে।”

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/mzxx4ksu

আফরোজা

×