ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

আনিসুল হক ও দরবেশকে অব্যাহতির চেষ্টায় কারা জড়িত?

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২২:১৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আনিসুল হক ও দরবেশকে অব্যাহতির চেষ্টায় কারা জড়িত?

সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া মেজর জেনারেল জিয়া

৫ ই আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন স্বৈরাচার হাসিনা। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর একে একে গ্রেফতার করা হয় ছাত্র হত্যার নির্দেশদাতা আওয়ামীলীগের মন্ত্রী এমপি ও নেতাকর্মীদের।

তার মধ্যে স্বৈরাচার হাসিনার সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক ও তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে দুই হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া, সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া মেজর জেনারেল জিয়াকেও গ্রেফতার করা হয়।

এবার জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার মাষ্টারমাইন্ড আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বৈরাচার হাসিনার সাবেক বেসরকারি ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার সানজিদা আফরিনের নির্দেশে কাজটি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। নথিপত্র ও পুলিশ সূত্র বলছে, তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর ডিবির পরিচয় গোপন করে থানা–পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি আদালতে জমার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নেননি। বিষয়টি জানাজানির পর তিনি অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে চলে গেছেন।

আনিসুল হক ও সালমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল সবুজ মিয়া ও মো. শাহ-জাহান মিয়া হত্যা মামলায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় সবুজকে মারধর করে ও শাহ-জাহানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরের দিন নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়। সবুজের চাচাতো ভাই মো. নুরনবী ও শাহ-জাহানের মা আয়শা বেগম মামলার বাদী হন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৩ আগস্ট আনিসুল ও সালমানকে আটক করে এই দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

দুটি হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া এবং আনিসুল ও সালমানকে অব্যাহতির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে অসুস্থতা দেখিয়ে ছুটিতে রয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ। বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছিল। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি। ডিবি সূত্র বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর আরিফ দাবি করেছেন, তিনি অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিনের (এখন এপিবিএনে কর্মরত) নির্দেশে কাজটি করেছেন।

মামলা দুটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার চেষ্টার আগে তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ সাক্ষ্য–স্মারকলিপিতে (মেমো অব এভিডেন্স বা এমই) ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সই নেননি। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ডিবি থেকে কোনো মামলায় অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য–স্মারকলিপিতে তদন্ত–তদারক কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার, অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রশাসন), উপকমিশনার এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কমিশনার ও ক্ষেত্রবিশেষ কমিশনারের সই লাগে। জাহাঙ্গীর আরিফ কর্মকর্তাদের সই নেওয়া এড়াতে নিজেকে নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক বলে উল্লেখ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এডিসি সানজিদা বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এ রকম আলোচিত মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সিদ্ধান্তের এখতিয়ার তাঁর নেই।

উল্লেখ্য, জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে ৮৫৮ জন নিহতের তথ্য প্রথম ধাপের খসড়া তালিকায় (২১ ডিসেম্বর) প্রকাশ করেছে গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি গত ২৮ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিল, তখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী নিহত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৫৮১ জন।

রিয়াদ

×