ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ০০:০২, ১৯ মার্চ ২০২৪

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ৮ম দিবস

আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ৮ম দিবস। আজ আমরা কুরআন নাজিলের মাসে কুরআনের একটি পরিচিত ও প্রিয় সূরা নিয়ে আলোচনা করব তা হলো সূরা ফিল। আমাদের দেশের ভাষায় সূরা আলামতারা। ফিল মানে হাতি বা হস্তি। সূরা ফিলে বর্ণিত হস্তী বাহিনীর ঘটনাটি অতি চমকপ্রদ ও শিক্ষনীয়। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাও নাজিল করেছেন। যা আমরা পাঞ্জেগানা নামাযের সময় সহজ ও সুন্দর সূরা মনে করে তিলাওয়াত করে থাকি।

আল্লাহ তায়ালার পবিত্র ঘর খানায়ে কাবার সঙ্গে ঔদ্ধ্যত্তপূর্ণ আচরণের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি প্রদানের কাহিনী ছিল সূরা ফিল বা হস্তী বাহিনীর ঘটনার পটভূমি।  হাবশার বাদশাহর তরফ থেকে ইয়ামান দেশে আবরাহা গভর্নর ছিল। সে ‘সানআ’তে একটি খুব বড় গির্জা নির্মাণ করে। আর চেষ্টা করল, যাতে লোকেরা কাবাগহ ত্যাগ করে ইবাদত ও হজ-ওমরাহর জন্য এখানে আসে। এ কাজ মক্কাবাসী তথা অন্যান্য আরব গোত্রের জন্য অপছন্দনীয় ও অপমানের ছিল। অতএব তাদের মধ্যে একজন আবরাহার নির্মাণকৃত উপাসনালয়ে মলমূত্র ত্যাগ করে নোংরা করে হাস্যরসের সূত্রপাত ঘটায়।
 আবরাহার কাছে খবর পৌঁছল যে, গির্জাকে কেউ  নোংরা ও অপবিত্র করে দিয়েছে। যার প্রতিক্রিয়ায় সে কাবা ঘরকে ধ্বংস করার দৃঢ়সংকল্প  গ্রহণ করে। সে বহু সংখ্যক  সৈন্যসহ মক্কার ওপর হামলা করার উদ্দেশে রওনা হলো। সঙ্গে ছিল হাতির বহর। মক্কার কাছে পৌঁছে সৈন্যরা (মক্কা শরিফের মহান সর্দার) নবী মুহম্মদ (সা.)-এর দাদার উটগুলো দখল করে নিল।

এ ব্যাপারে আব্দুল মুত্তালিব আবরাহাকে বললেন, আমার উটসমূহকে ফিরিয়ে দিন; যা আপনার সৈন্যরা ধরে  রেখেছে। (আবরাহা বলল, এখন আমরা তোমাদের কাবা ধ্বংস করতে এসেছি, আর তুমি কেবল উট ছেড়ে দেওয়ার দাবি কর? তিনি বললেন, উটগুলো আমার। তাই আমি সেগুলোর হিফাযত চাই।) বাকি থাকল কাবা ঘরের ব্যাপার যাকে আপনি ধ্বংস করতে এসেছেন, তো সেটা হলো আপনার ব্যাপার আল্লাহর সঙ্গে। কাবা হলো আল্লাহর ঘর। তিনিই হলেন তার হিফাযতকারী। আপনি জানেন আর বায়তুল্লাহর মালিক আল্লাহ জানেন।

এর আগে তিনি কাতর করে কাবার দরজায় গিয়েও পরওয়ারদিগারের কাছে ফরিয়াদ করে আসেন : মাবুদ! আমরা বংশ পরম্পরায় তোমার এ ঘরকে হিফাজত করে  এসেছি। কিন্তু আজ এক জালিমের কবলে আমি এবং আমার পরিবার। তাই এ দরজাতেই তোমার  ঘরের চাবি রেখে গেলাম এবং আমাদের বিশ^াস তুমি নিজগুণে তা হিফাজত করবে।’ 
অতঃপর যখন এই সৈন্যদল (মিনা এলাকার কাছে) ‘মুহাসসার’ উপত্যকার কাছে  পৌঁছল, তখন আল্লাহ তায়ালা একটি পাখির দলকে প্রেরণ করলেন যাদের ঠোঁটে এবং পায়ে পোড়া মাটির কাঁকর ছিল যা ছোলা অথবা মসুরির দানা সমপরিমাণ ছিল। পাখিরা ওপর  থেকে  সেই কাঁকর বর্ষণ করতে লাগল।  যে সৈন্যের ওপর এই কাঁকর পড়তে লাগল অমনিতে তার হাতিসহ সবকিছুর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যেতে লাগল। অবশেষে পালিয়ে ‘সানআ’ পৌঁছতে পৌঁছতে খোদ আবরাহারও একই পরিণাম হলো।

এভাবে আল্লাহ তায়ালা নিজ ঘরের হিফাযত করলেন। (আয়সারুত তাফসির)?
সূরা ফিলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার প্রিয় হাবীব হুজুরে কারীমকে (স.) সম্বোধন করে সুন্দর বলেছেন আলামতারা কাইফা ফায়ালা রব্বুকা বিআসহাবিল ফিল...।’ তরযমা- তুমি কি দেখনি (কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সঙ্গে তোমার প্রতিপালক কীরূপ ব্যবহার করেছিলেন? তিনি কি তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেননি? আর তিনি তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেছিলেন। যারা তাদের ওপর প্রস্তর কংকর নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদের করে দিলেন ভক্ষিত তৃণ-ভুসির মতো।’ 
অধিক সংখ্যক চরিতবেত্তাগণের অভিমত হচ্ছে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (স.)-এর জন্মলাভের মাত্র ৫০ কিংবা ৫৫ দিন পূর্বে মহরম মাসে। এরই প্রেক্ষিতে এটা ধরে নেওয়া যায় যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ভাগে কিংবা মার্চ মাসের প্রথম ভাগে। হস্তী বাহিনীর এ ঘটনা ছিল আগামী দিনের নবী এবং ক্বাবা শরিফের জন্য আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও সাহায্যের এক সুস্পষ্ট নিদর্শন।

আল্লাহ পাক আমাদের এবং ইসলামকে সেভাবে রক্ষা কর যেভাবে খানায়ে কাবার হেফাজত করে দুনিয়ার মানুষের সামনে ইতিহাস ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা যেন বিশুদ্ধভাবে সূরা ফিলের তেলাওয়াত ও অর্থ হৃদয়ঙ্গম করি।

×