
সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ জন্মতিথি
সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ জন্মতিথি, শুভ জন্মাষ্টমী। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দি দেবকী ও বাসুদেবের ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
সনাতন ধর্মানুসারে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতার উদগাতা শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের সময়ে পৃথিবীতে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সেই বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্ত ও বিশ্বাসীদের কাছে প্রেমাবতার।
ধর্মানুসারে, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীভগবদগীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।
ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিস্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের অবির্ভাব ঘটে। তাঁর জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন।
শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করছে হাজার হাজার বছর ধরে। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো- অন্যায়কে পরাভূত করে সত্য, ন্যায় ও ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা।
দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতায় আজ বুধবার উদ্যাপন করা হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাদের সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে হিন্দু ধর্মাবলম্বী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
এ উপলক্ষে সারাদেশে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা আয়োজিত হবে। দেশের বিভিন্ন মন্দির, মঠ ও পূজাম-পে গীতাযজ্ঞ, কীর্তন, আরতি, প্রসাদ বিতরণ ও ধর্মীয় আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ জাতীয় সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হবে এবং বেতার-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
আজ বিকেলে ঢাকার ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গন থেকে বের করা হবে বর্ণাঢ্য জন্মাষ্টমী মিছিল। মহানগর সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির দুদিনের কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উৎসব আজ বুধবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে শুরু হচ্ছে। আজ সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড শংকর মঠ ও মিশন এই গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করবে। বিকেল ৩টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির সংলগ্ন পলাশীর মোড় থেকে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা এবং রাতে কৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যৌথভাবে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বিশেষ অতিথি হিসেবে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে বিকেল তিনটায় আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, উদ্বোধন করবেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে চারদিনব্যাপী জন্মাষ্টমী মহোৎসবের আয়োজন করবে। প্রথম দিনে আজ বিকেল সাড়ে চারটায় আলোচনা সভা এবং গরিব দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ করা হবে।
ডিএমপির ১০ নির্দেশনা ॥ শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন (জন্মাষ্টমী) উপলক্ষ্যে আজ বুধবার শোভাযাত্রা হবে। মূল শোভাযাত্রা শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে শুরু হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রা উপলক্ষ্যে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ডিএমপির নির্দেশনায় বলা হয়, শোভাযাত্রা চলাকালীন যানজট পরিহারের লক্ষ্যে ওই এলাকায় চলাচলরত গাড়িচালক ও ব্যবহারকারীদের বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রুট পরিহারের জন্য অনুরোধ করা হলো।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রার রুট হলো- শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির-পলাশী বাজার-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্ত্বর-হাইকোর্ট-বঙ্গবাজার-নগর ভবন-গোলাপশাহ্ মাজার-গুলিস্তান মোড়-নবাবপুর রোড-রায় সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্ক পর্যন্ত। একইসঙ্গে নিরাপত্তা নির্দেশনাবলী সকলকে মেনে চলার জন্য অনুরোধ করেছে ডিএমপি। নির্দেশনাবলী হয়েছে-উল্লিখিত জন্মাষ্টমীর রুটে কোনো ধরনের যানবাহন পার্কিং না করা; রুট এলাকার আশপাশের সকল দোকান শোভাযাত্রা চলাকালীন বন্ধ রাখা; উচ্চস্বরে পিএ/সাউন্ড সিস্টেম না বাজানো; শোভাযাত্রায় প্রারম্ভিক অবস্থা থেকে মিলিত হতে হবে, কোনোক্রমেই শোভাযাত্রার মাঝপথ দিয়ে কোনো ব্যক্তি শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না; নিরাপত্তার স্বার্থে হ্যান্ড ব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, বড় ভ্যানিটি ব্যাগ, পোটলা, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, অস্ত্র, কাঁচি, ক্ষতিকারক তরল, ব্লেড, দিয়াশলাই, গ্যাসলাইট সঙ্গে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া যাবে না; শোভাযাত্রা চলাকালে রুটে কোনো ধরনের ফলমূল ছোড়া যাবে না; শোভাযাত্রা চলাকালীন রাস্তায় অহেতুক দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না; সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি বা বস্তু পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ পুলিশকে অবহিত করা; শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ভলানটিয়ার (স্বেচ্ছাসেবক) ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পরামর্শ মেনে চলা এবং ব্যারিকেড, পিকেট ও আর্চওয়ে ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পুলিশকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা।