ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমৃত্যু সংগ্রামী সম্পাদক

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২১ মার্চ ২০২৩

আমৃত্যু সংগ্রামী সম্পাদক

আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সত্যকবি’ কবিতার কয়েকটি পঙক্তি উপস্থাপনে দেশের মার্গশীর্ষ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের অগ্রগণ্য অভিভাবক ও সৎ-সততার জ্ঞানাঙ্কুর পথিকৃৎ, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী ও মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনায় পরিপূর্ণ ঋদ্ধ দৈনিক জনকণ্ঠের প্রয়াত সম্পাদক সর্বজনশ্রদ্ধেয় আতিকউল্লাহ খান মাসুদের প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাই।

‘করোনি বরণ দাসত্ব তুমি আত্ম-অসম্মান,/ নোয়ায়নি মাথা চির-জাগ্রত ধ্রুব তব ভগবান,/ সত্য তোমার পর-পদানত হয়নি ক’ কভু, তাই/ বলদর্পীর দণ্ড তোমায় স্পর্শিতে পারে নাই!/ যশ-লোভী এই অন্ধ ভ- সজ্ঞান ভীরু-দলে/ তুমিই একাকী রণ-দুন্দুভি বাজালে গভীর রোলে!/ মেকীর বাজারে আমরণ তুমি রয়ে গেলে কবি খাঁটি,/ মাটির এ দেহ মাটি হলো, তব সত্য হলো না মাটি।/ আঘাত না খেলে জাগে না যে-দেশ, ছিলে সে দেশের চালক,/ বাণীর আসরে তুমি একা ছিলে তূর্যবাদক বালক।’ বস্তুতপক্ষে বহুধা গুণের অমর সমীকরণে প্রতিভাত অসাধারণ ব্যক্তিত্বের এই মনীষার অবিস্মরণীয় কর্মযজ্ঞ তাঁকে সমৃদ্ধ এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। গণমাধ্যম পরিম-লে নির্মাণ করেছেন নিজের মহিমায় অত্যুজ্জ্বল বিকল্পহীন নতুন অধ্যায়।  
দেশের সচেতন মহল কৃতাহ্নিক এই কর্মবীরের সর্বোচ্চ কীর্তির নিদর্শন-আদর্শ হিসেবে ১৯৯৩ সালে সর্বপ্রথম অত্যাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সমন্বয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় জাতীয় পত্রিকা দৈনিক জনকণ্ঠের প্রকাশকে সাদরে বরণ করে আকাশচুম্বী মর্যাদায় সমাসীন করেছেন। দেশের পাঁচ জায়গা থেকে একযোগে প্রকাশ করে তিনি গণমাধ্যম শিল্পে অভূতপূর্ব সৃজনশীল উপমা রচনা করেন। সংবাদ পরিবেশনে নতুন ধারা তৈরিতে দৈনিক জনকণ্ঠের মননশীল অবদান অনস্বীকার্য।

প্রকাশের সূচনা থেকেই দৈনিক জনকণ্ঠের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পটভূমিকে অবিচল ধারণ ও পাঠক-নাগরিক সমাজ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনে অভিনব ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে সরব অবস্থানস্বরূপ পত্রিকার অনবদ্য প্রকাশনা ‘সেই রাজাকার’ প্রাসঙ্গিকতায় অভাবনীয় মাত্রায় সমাদৃত। 

পত্রিকা প্রকাশের প্রথম থেকেই মহান স্বাধীনতার সপক্ষে নিরবচ্ছিন্ন ও আপোসহীন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথ প্রদর্শনে অগ্রগণ্য থেকে মূলত তথ্যপ্রবাহের সংযোগকে শুধু সচল করেননি, এর বিকাশমানতায় উৎকৃষ্ট নেতৃত্বের অভিধায়ও তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন। গ্রাম্য ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রতারণা-বঞ্চনা চিত্রিত করে ২০১৪ সালের ১২ মে ‘এই বলদ আমিনের ... মারহাবা মারহাবা’ শিরোনামে উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশ ছিল ব্যাপক পাঠকনন্দিত।

কিন্তু তৎকালীন সরকারের কুচক্রী মহল বিষয়টিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে সম্পাদক-উপদেষ্টা সম্পাদক-নির্বাহী সম্পাদক-সহকারী সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে গ্রেফতার হন ৩ জন। ২০০১ সালের পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের সূচনা এবং ২০০৩ সালে তাঁর বাড়ির একটা অংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ারও নজির রয়েছে।  
পরবর্তীতে সেনাসমর্থিত এক এগারোর সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার অতিউৎসাহী অপতৎপরতায় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ এই কৃতী মানবকে রাত ১০টায় জনকণ্ঠ ভবন থেকে গ্রেফতার করে দুদকের মাধ্যমে একের পর এক মিথ্যা মামলা-জরিমানা-দ- দিয়ে কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়।

তাঁর সকল প্রতিষ্ঠান, গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের প্রধান কার্যালয়সহ জনকণ্ঠ ভবনের ৫টি ফ্লোর সিলগালা করে বন্ধ করা হয়। সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবসমূহের লেনদেন বন্ধ হয়ে ঋণখেলাপিতে পরিণত করে। দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকাও প্রায় তিন বছর যাবৎ বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসান সত্ত্বেও অতিকষ্টে চালু রাখা হয়েছিল। দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের আবহ পুনর্প্রতিষ্ঠা পেলে ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি দীর্ঘ ২২ মাস ১২ দিন কারাগারের অন্ধকার জীবনের অবসান ঘটিয়ে বীরদর্পে মুক্ত হয়ে দেশ ও দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের কর্মযজ্ঞে তিনি আত্মনিয়োগ করেন।

আদালতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মামলা পরিচালনায় সকল মিথ্যা মামলা বাতিল ঘোষিত হয়। সর্বশেষ ১১ অক্টোবর ২০১০ মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক ‘হিসাববহির্ভূত সম্পদ অর্জন’ সম্পর্কিত মামলাটি বাতিলের মধ্য দিয়ে দুদকের দায়ের করা সাজাপ্রাপ্ত ৬টি মামলা থেকে মুক্তি পান। 
১৯৫১ সালের ২৯ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের লৌহজংয়ের উত্তর মেদেনীম-ল গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে খান বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কৃতী মানস জনাব আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। এলাকার আলোকিত মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত মরহুম দবির উদ্দিন খান ও মরহুমা জসিমুন নেছা খানের ৮ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সপ্তম। ঢাকার গোপীবাগের খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল থেকে প্রাথমিক ও আর্মানিটোলা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে পড়তে যান বড় ভাইয়ের কর্মস্থল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে করাচী থেকে ঢাকায় ফিরে জগন্নাথ কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। কলেজজীবনে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই ব্যবসায় তাঁর হাতেখড়ি। মুক্তিযুদ্ধকালীন  একুশ বছরের টগবগে যুবক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সতীর্থদের নিয়ে ভারতে গেরিলা ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধের ২ নং সেক্টরের অধীন মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা কমান্ডারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার লিখিত ‘যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা’ নিবন্ধে যুদ্ধকালীন অনেক দুঃসাহসিক-বীরত্বগাথা কর্মকা-ের ইতিবৃত্ত উপস্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে সফলতার সঙ্গে বিজ্ঞানে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি পুরোপুরি ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করেন। 
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি ‘বস কর্পোরেশন’ নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। ১৯৭৮ সালে জাপানের কারিগরি সহযোগিতায় ‘গ্লোব ইনসেকটিসাইডস লিমিটেড’ নামে দেশের প্রথম মশার কয়েল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, পরবর্তীতে দেশের মশার কয়েলের ব্র্যান্ড ধোঁয়াবিহীন মশা নিবারক গ্লোব ম্যাট, তেলাপোকা ধ্বংসকারক গ্লোব এ্যারোসল, ১৯৯০ সালে গণচীনের কারিগরি সহযোগিতায় গ্লোব মেটাল কমপ্লেক্সসহ নানা মাঝারি ও ভারি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

দেশকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশজ উৎপাদনে অর্থনীতিকে সচল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাঁর অভিনব চিন্তা-চেতনা গভীর তাৎপর্য বহন করে। ১৯৯৬ সালে ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডে প্রতিষ্ঠা করেন জনকণ্ঠ ভবন নামে পরিচিত অত্যন্ত নান্দনিক কারুকার্যখচিত ১৫ তলাবিশিষ্ট নিজস্ব ভবন। ১৯৯৭ সালে ডেইরি ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে গ্লোব খামার প্রকল্প, ১৯৯৮ সালে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর গৃহায়ন সমস্যার সমাধানকল্পে গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোব কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’ এবং ২০০০ সালে গ্লোব জনকন্ঠ শিল্প পরিবার প্রতিষ্ঠা করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারায় নতুন অধ্যায় নির্মাণ করেন। 
গ্রুপের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে প্রগাঢ় সাংগঠনিক যোগ্যতা ও প্রশাসনিক দক্ষতার প্রতিফলনে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন ও কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অমর-অক্ষয় হয়ে থাকবে। ২০০৩ সালে তিনি দেশে প্রথম গ্লোব ফ্রি ফ্লো আয়োডাইজড সল্ট উৎপাদন কারখানা ও ২০১০ সালে পঞ্চগড়ে প্রতিষ্ঠা করেন গ্লোব টি কোম্পানি লিমিটেড।

শিল্প খাতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন সিআইপির মর্যাদা। রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি দুদফায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং গণচীনের বেজিংয়ে ভ্রমণ করার সুযোগ লাভ করেন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ওতপ্রোত সম্পর্ক, ১৯৮৪-৮৬ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সহসভাপতি ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান, ১৯৮৫-৮৬ সালে হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯১-৯৩ বিক্রমপুরের লৌহজং মহাবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালনসহ নানা প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ প্রতিভার স্বাক্ষর ও গুণগত পরিবর্তনে অন্যতম পুরোধা হিসেবে নিরলস পরিশ্রম তাঁকে এক পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।  
দৈনিক পত্রিকার উন্নয়ন-প্রচার ও প্রসারের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজন সরকার বা রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে সত্যনিষ্ঠ যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণে তুলে আনা যা পত্রিকাকেও তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে। এটি একটি প্রচলিত পারস্পরিক যোগসাজশ। চিরাচরিত শুদ্ধাচার, রীতি-নীতিকে অবজ্ঞা নয়, সমাজের অসংখ্য অসঙ্গতির গভীর অধ্যয়ন এবং সমস্যার সমাধান নিরূপণে উদ্ভাবিত নবতর পন্থার সমাহারে কার্যকর সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে উদ্দিষ্ট লক্ষ্য সাধনে দৈনিক জনকণ্ঠকে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন প্রয়াত সম্পাদক জনাব আতিকউল্লাহ খান মাসুদ।

কর্ম ও চিন্তায় তিনি সমগ্র বাংলাদেশে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন অগ্রগণ্য। তিনি সংবাদপত্র প্রকাশকে বাণিজ্যিক উপাদান হিসেবে নয়, সমাজ-রাজনীতি-শিক্ষা-অর্থনীতি-বিনোদনসহ সকল নান্দনিক বিষয়ের প্রচার-প্রসারে একটি দায়িত্বশীল কর্তব্য হিসেবে হৃদয় গভীরে ধারণ করেছিলেন। দেশের উন্নয়নের সামগ্রিক বিষয়সমূহকে অগ্রাধিকার দিয়ে দৈনিক-সাপ্তাহিক-পাক্ষিক-মাসিক নানামুখী আলোচনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম- গোলটেবিল আয়োজনের মাধ্যমে একজন পরিশুদ্ধ সমাজমানসরূপে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার অনিন্দ্য সুন্দর উদ্যোগ অতিশয় প্রশংসিত। শিক্ষা- যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা-দক্ষতা-চিন্তা-চেতনা ও প্রগতি মূল্যায়নে ঋদ্ধ জনাব আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সমগ্র বাংলাদেশকে নানাভাবে উপকৃত করেছেন। দেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন।  
৭১ বছর বয়সী প্রয়াত এই কলমযোদ্ধার রাজসিক জীবনচরিত প্রজ্ঞা-মেধা ও শ্রমের নবতর পরিশিষ্ট রচনায় নিরন্তর সফল ও সার্থক। শুধু স্বকীয় দৃশ্যপট তৈরিতে অন্তর্দীপন পদচারণা নয়, দেশের আর্থ-সামাজিক টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যেও তাঁর গৃহীত সকল মহৎ পরিকল্পনা এবং প্রায়োগিক কর্মপন্থা অবশ্যই তাঁকে সর্বদা দীপ্যমান রাখবে।

গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ক্ষুরধার লেখনী, লেখক সৃষ্টি বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন-দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম-মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পাঠোদ্ধারে অবর্ণনীয় শিক্ষা-সচেতনতা প্রচার-প্রসারে তাঁর অবদান ছিল প্রদৃপ্ত।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নত বিশ্বের মর্যাদায় সমাসীন হওয়ার অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির অভিযাত্রায় জনকণ্ঠ ও প্রয়াত সম্পাদক শ্রদ্ধাভাজন জনাব মাসুদের নির্ভীক-সাহসিক-দৃঢ়চেতা ভূমিকা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিকশিত করার সকল পদক্ষেপই ছিল অত্যন্ত যুগোপযোগী।

দেশের আপামর জনসাধারণের অন্তরে ধারণকৃত অত্যন্ত সজ্জন, বাংলার মাটি ও মানুষের প্রতি মহত্ত্ব-মমত্বে পরিপুষ্ট কৃতীমানব মাসুদ ভাইয়ের না ফেরার দেশে যাত্রার করুণ সুর দেশের প্রতিটি জনপদে প্রতিনিয়ত অনুরণিত হচ্ছে। মাসুদ ভাইয়ের চিরস্মরণীয়-চিরঅম্লান স্মৃতি কখনো বাংলার ইতিহাস থেকে নির্বাসিত করার নয়।  
গণমাধ্যম সাম্রাজ্যে সত্য-বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় মুকুটবিহীন সম্রাট অভিধায় ভূষিত এই মহানায়ক মৃত্যুকে জয় করে বাংলাদেশের মানসপটে নিরন্তর অপরাজিত রয়েছেন। সর্বকালে সর্বব্যাপী তিনি চিরঞ্জীব দৃঢ়চেতা সাংবাদিকের অবারিত অবস্থানে চিরভাস্বর থাকবেন। অজস্র পাঠকের মতো আমারও দৃঢ়বিশ্বাস সাংবাদিকতা-ব্যবসা-সমাজসেবা-সমাজ সংস্কার ইত্যাদি যুগান্তকারী কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে তিনি  দেশবাসীর হৃদয় গভীরে কর্ম-প্রেরণার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে জাগরুক রয়েছেন এবং চিরকাল থাকবেন।

আকস্মিক না ফেরার দেশে তাঁর চলে যাওয়া প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে সীমাহীন শূন্যতা তৈরি হয়েছে। বিবেক-আবেগ-দেশপ্রেমে পরিশুদ্ধ অতি উঁচুমাত্রিকতার গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের প্রণিধি অভিভাবক ও অফুরন্ত উদ্ভাবনী দীপনে উন্নয়ন প্রকৌশলী এই মহান ব্যক্তির তিরোধান দিবসে আবারও তাঁর স্মৃতির প্রতি আনন্ত্য শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×