
তথ্য ও সম্প্রদারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
সোমবার সারাদিন সচিবালয়ে আলোচনাা কেন্দ্রবিন্দু ছিলো তথ্য সচিবের বাধ্যতামূলক অবসর। ঠিক কী কারণে তাকে বাধ্যতামলূক অবসর দিয়েছে এ নিয়ে কর্মকর্তাদের আগ্রহ অনেক বেশি ছিলো।
তবে এ ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রদারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আগের মতোই বলেছেন, তাকে অবসরে পাঠানোর অন্তর্নিহিত কারণ জানা নেই। এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। এদিকে সদ্য বিদায়ী তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন বলেছেন, জীবনে কখনো নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে আপস করিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, চাকরির মেয়াদ একবছর থাকতেই নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠানোর অন্তর্নিহিত কারণ জানা নেই। সোমবার সচিবালয়ে টেলিভিশন শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। রবিবার তাকে অবসর দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আগামী বছরের (২০২৩ সাল) ২৫ অক্টোবর চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল মকবুল হোসেনের।
তিনি বলেন, প্রথমত রবিবার আমি দেখেছি, মন্ত্রণালয়ের এসে শুনেছি। অন্তর্নিহিত কী কারণ সেটা আমি জানি না। অন্তর্নিহিত কারণ বলতে পারবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আমার অন্তর্নিহিত কারণ জানা নেই।
আপনি তো অনেক দিন ধরে তার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্থ কিংবা সরকারবিরোধী কোনো কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছেন বলে কী মনে হয়েছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেখুন, আমি জানি না অন্তর্নিহিত কারণ। এটা আপনারা জনপ্রশাসনকে প্রশ্ন করতে পারেন।
এর মাধ্যমে সরকার প্রশাসনকে কী বার্তা দিলো- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সচিব অবসর নিতে পারেন, তাকে আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে, দেয়। আবার সচিবের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে সচিবকে সরিয়ে দেয়, অবসরে দেয়, এগুলো আগেও ঘটেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই এর ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে।
এটিকে কী স্বাভাবিক বলে মনে করছেন- প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই, এটি সরকারের মধ্যে অতীতেও ঘটেছে, বিভিন্ন সময়ে ঘটে।
সাংবাদিকদের আগ্রহ থাকলেও এ বিষয়ে আর প্রশ্নের জবাব দিতে চাইছিলেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এরপরও একজন সাংবাদিক বলেন, আপনি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, আপনার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এক বছর আগে বিদায় দেওয়া হলো- তখন মন্ত্রী বলেন, এর আগে কোনো সচিবই এক দেড় বছরের বেশি এখানে থাকেননি।
বলা হচ্ছে সচিব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, আপনি তার ব্যাপারে বিরক্ত ছিলেন- এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ তো স্বাভাবিকভাবে চলছে। আমি প্রতিদিন মন্ত্রণালয়ে আসি। প্রতিদিন দু-ঘণ্টার জন্য হলেও আসি। কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর তা বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করি।
মামলাগুলোও আমি তদারক করি। মন্ত্রণালয়ের কাজ করার ক্ষেত্রে আমি যেহেতু তদারকি করে যে কাউকে দিয়ে কাজ করাতে পারবো।
এদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই অবসর দেওয়া তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন বলেছেন, জীবনে কখনো নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে আপস করিনি। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মকবুল হোসেন।
এরপর দুপুর দেড়টার দিকে তিনি সচিবালয়ে তার দপ্তরে আসেন। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা যান তার কক্ষে। তিনি তার চেয়ারে না বসে পাশে দাঁড়িয়ে ৩০ মিনিটের মতো কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে মাঝে মধ্যেই আবেগ তাড়িত হয়ে যাচ্ছিলেন।
আপনি কি মনে করতে পারছেন, কী কারণে এটি ঘটতে পারে। দুর্নীতির অভিযোগের কথাও শোনা যাচ্ছে এ বিষয়ে মকবুল হোসেন বলেন, আমার জানামতে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। আমি যতদিন এখানে কাজ করেছি, সততার ও নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি, সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, আমার জানা নেই, আমার জ্ঞানের ভেতর নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধের কারণে অবসরে দেওয়া হয়েছে, সেটি আমার জানা নেই। যেহেতু এটি সরকার পারেন, আইনের ভেতরেই পারেন সেজন্য এটি কার্যকর। আমি সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল।
অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার একটি অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী— এ প্রশ্নের জবাবে বিদায় নেওয়া সচিব বলেন, এটি আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধান করতে পারেন। সরকারবিরোধী কোন কর্মকান্ডের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি না। যদি থেকে থাকে সেটি আপনারা প্রচার করতে পারেন, আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নেই।
আপনার কি সম্পৃক্ততা ছিল— জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ছিল না। আমার আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। যদি ওখানকার এমপিকে জিজ্ঞেস করেন, আমার রাজনৈতিক পরিচয়টা জানতে পারবেন। তাহলে সবচাইতে ভালো। আমি হলে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিও ছিলাম।
এমএস