
স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রিয়জনের কাছে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশের অন্যতম উপায় হচ্ছে ফুল উপহার দেয়া। তবে ভালবাসা দিবসে এই ফুল হয়ে গেছে যেন সোনার হরিণ। একটি গোলাপের দামই ১০০ টাকায় উঠে গেছে। ভালবাসা ও বসন্ত দিবসে ঢাকার ফুলের বাজার এবার বেশ উত্তাপ ছাড়িয়েছে।
মহামারী করোনায় গত বছর ভালবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব ঘটা করে পালিত হয়নি। এ কারণে ফুলও বিক্রি করতে পারেননি শাহবাগের খুচরা বিক্রেতারা। তবে এবার একদিনে দুই উৎসব হওয়ায় সে ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন তারা।
সোমবার শাহবাগের খুচরা ফুলের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার ভিড় লেগে আছে। বিভিন্নভাবে সেজেগুজে ঘুরতে বের হওয়া নানা বয়সীরা ফুল কিনছেন। কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে ভালবাসা দিবস, কেউ পরিবার নিয়ে বসন্ত উৎসব পালন করছেন।
দোকানগুলোতে মানভেদে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত। দেশে চাষ হওয়া বিভিন্ন অঞ্চলের ফুল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। অন্যদিকে চায়না গোলাপ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাথায় পরার ‘আর্টিফিশিয়াল’ ক্রাউন বিক্রি হচ্ছে দেড়শ’ টাকায়, ‘ন্যাচারাল’ ফুলে তৈরি ক্রাউন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। গাঁদা ফুলের প্রতিটি মালা কোন দোকানে ৫০ টাকা, আবার কোন দোকানে ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে।
শাহবাগের খুচরা ফুল বিক্রেতা মালঞ্চ পুষ্প কেন্দ্রের মালিক মোঃ জুয়েল বলেন, আমার দোকানে মাথার ক্রাউন (আর্টিফিশিয়াল) বিক্রি হচ্ছে দেড়শ’ টাকা, ‘ন্যাচারাল’ ক্রাউন ১০০ টাকায়। এছাড়া ৪০টা ফুলের তৈরি একটি গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। তিনি বলেন, ৫০ হাজার টাকার ফুল কিনেছিলাম। বিক্রিও ভাল হচ্ছে।
ঠিক তার পাশের দোকান ইকো ফ্লাওয়ার শপে গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। দামে এত পার্থক্য কেন জানতে চাইলে বিক্রেতা ওয়ালিউল্লাহ বলেন, বেশি দামে কেনা, তাই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আরও কয়েকটি দোকানে কথা বলে জানা যায়, ৩০ টাকায় কেনা প্রতিটি ফুল তারা বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এর মধ্যে মানে ভাল ও তাজা হলে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কেনা প্রতিটি চায়না ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। বাগান থেকেই ফুলের দাম বেশি রাখা হচ্ছে বলে দাবি অনেকের।
এ বিষয়ে শাহবাগ ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ আতাউর রহমান বলেন, গত বছর করোনার কারণে আমরা ফুল বিক্রি করতে পারিনি। এবার সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছি। যদিও অন্যান্য বছরে আরও বেশি বিক্রি হতো। শাহবাগে শুধু খুচরা বিক্রি করে এমন দোকান ৫১টি। এদের মধ্যে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে অনেকে এক লাখ টাকার ফুলও কিনেছেন। সব মিলিয়ে বিক্রি ভালই হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও সন্তুষ্ট।
টিএসসির মূল গেটের পাশেই বিভিন্ন রকম ফুল নিয়ে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ-ছয় শিক্ষার্থী। বন্ধুরা মিলে ফুল কিনে টিএসসিতে আসা তরুণ-তরুণীদের কাছে বিক্রি করছেন তারা। ফুল কিনতে আসা এক তরুণীকে সেখানে গোলাপের দাম জিজ্ঞাসা করতে দেখা যায়। দাম ১০০ টাকা শুনেই তা আর কেনেননি তিনি।
ফুল কিনেই আরেক ক্রেতা বললেন, ফুল কিনেছি, কিন্তু অনেক দাম। ৮০ টাকা করে রাখছে একটি ক্রাউন। অল্প কয়েকটা ফুল দিয়ে তৈরি এটা।
রুহি সাদি অবনী নামে এক তরুণী বলেন, পাঁচগুণ বেশি দাম দিয়ে ফুল কিনতে হচ্ছে। বিশেষ দিন উপলক্ষে না কিনে উপায়ও নেই। গোলাপ কিনেছি ৫০ টাকায়।
ফুলের দোকানের উদ্যোক্তা ঢাবির সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী আহম্মদ মুসা বলেন, বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে সময় কাটাতে ও যারা ঘুরতে আসবে তারা যেন প্রিয় মানুষটিকে অন্তত ফুল দিয়ে ভালবাসা জানাতে পারে সে চিন্তা থেকেই এই ধরনের আয়োজন করেছি বন্ধুরা মিলে। ফুল নেয়ার পাশাপাশি মুহূর্তটাকে যেন আরও ভালভাবে ধরে রাখতে পারে তার জন্য লাভ চিহ্নের ফটোবুথ করেছি।
ফুলের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শখের বসে উচ্চমূল্য দিয়েই কিনে এনেছি। বিক্রি করার সময় দাম আসলে নির্দিষ্ট করছি না। ১০০ টাকা নয়, গোলাপের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকাও রাখছি।
দোকানের আরেক উদ্যোক্তা আশিক রিফাত বলেন, সম্পূর্ণ ভাল লাগা থেকেই করেছি এটা। কিছু স্মৃতি ধরে রাখতেই এই ধরনের ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি।