অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩ মামলায় আসামি আড়াই শতাধিক, ৫ জনের সাজা মোবাইল কোর্টে
রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে কুমিল্লায় বাড়িঘরে হামলা, আগুন
মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে কটূক্তিকারী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন ও তার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রশংসা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় কুমিল্লার বাঙ্গরা বাজার থানায় দুই মামলায় ২ জনকে গ্রেফতারসহ তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশী ব্যবস্থা নেয়ার পরও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বন কুমার শীবেরসহ দুই বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাটি রাজনৈতিক ফায়দা লোটার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত বলে দাবি পুলিশ প্রশাসনের। এদিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কোরবানপুর গ্রামে রবিবার বিকেলে সংঘটিত ওই ঘটনায় রাতভর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় সোমবার পৃথক ৩টি মামলায় আড়াই শতাধিক লোককে আসামি করা হয়েছে। বাঙ্গরা বাজার থানার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের পাশেই আন্দিকোট ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার সকালে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন কোরবানপুর গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে রবিবার রাতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
জানা গেছে, মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে কটূক্তিকারী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন ও তার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রশংসা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় কোরবানপুর গ্রামের শংকর দেবনাথ (৫৪) এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও উস্কানিমূলক ছবি সংবলিত স্ট্যাটাস দেয় একই থানার আন্দিকোট গ্রামের অণিক ভৌমিক (২০)। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোরবানপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য মোঃ ধন মিয়া বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় শংকর দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি এবং হায়দরাবাদ গ্রামের মোঃ সোহেল মিয়া বাদী হয়ে একই ধারায় অণিক ভৌমিকের বিরুদ্ধে একটিসহ পৃথক ২টি মামলা করেন। মামলায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। এদিকে রবিবার বিকালে স্থানীয় কোরবানপুর হাইস্কুল মাঠে উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়। একপর্যায়ে তারা স্থানীয় পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বন কুমার শীবের ও আসামি শংকরের বাড়িতে আগুন দিয়ে তাদের ৬টি ঘর পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ স্ট্যাটাস প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেফতার করার পরও এ ঘটনায় একটি মহল পরিকল্পিতভাবে অনভিপ্রেত-অনাকাক্সিক্ষত এ হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। অগ্নিসংযোগ হামলা ও ভাংচুরের এসব ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত চেয়ারম্যান বন কুমার শীব, সঞ্জিত ও লিটন বাদী হয়ে ২৬৩ জনের বিরুদ্ধে বাঙ্গরা বাজার থানায় পৃথক ৩টি মামলা রুজু করে। এর মধ্যে একটি মামলায় ৯১ জন, অপর ২টি মামলায় ৮৭ জন ও ৮৫ জনকে আসামি করা হয় বলে জানিয়েছেন বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান। তিনি আরও জানান, ঘটনার পর রবিবার রাতে কোরবানপুর গ্রামের সানু মিয়া (৩৮), এনু মিয়া (৪৮), হেলাল উদ্দিন (৫০), এরশাদ মিয়া (৪০), বাবু মিয়াকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানার আন্দিকোট ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এর আগে ঘটনার খবর পেয়ে রবিবার রাতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া বিজিবির ৩ প্লাটুন ও র্যাবের দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় এবং আশপাশের থানা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার সকালে স্থানীয় এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা কোরবানপুর গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যারা স্ট্যাটাস দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারপরেও এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে ওই চেয়ারম্যানের বাড়িতে কেন আগুন দেয়া হয়েছে তা তদন্ত করে বের করা হবে। তবে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখে ধারণা করা হচ্ছে এখানে ধর্মীয় বিষয়ের চেয়ে হামলাকারীদের ব্যক্তিগত রেষারেষি ও আক্রোশ বেশি ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, স্ট্যাটাস প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ সকল আইনগত নেয়ার পরও বৈরী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ^াসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আলেম সমাজের কোন লোকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। স্ট্যাটাস প্রদানকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার উদ্দেশ্যে যারা এ অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ৩টি মামলা হয়েছে এবং আরও ২টি মামলা করা হবে।