ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধভাবে বসবাসকারী ৭০০ বিদেশীর তালিকা তৈরি

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

অবৈধভাবে বসবাসকারী ৭০০ বিদেশীর তালিকা তৈরি

শংকর কুমার দে ॥ দেশের ভেতরে বছরের পর বছর অবৈধভাবে বসবাসকারী ৭০০ বিদেশীর তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। তাদের আটক করার জন্য খুঁজছে পুলিশ। প্রতারণা, ক্রেডিটকার্ড জালিয়াতি, জঙ্গী তৎপরতা, আদম পাচার, জাল ডলার ব্যবসা, মাদক পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তালিকাভুক্ত এসব বিদেশীর বিরুদ্ধে। নাইজিরিয়া, শ্রীলঙ্কা আফ্রিকা, ফিলিপিন্সসহ কয়েকটি দেশের নাগরিক এসব বিদেশী। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে ৭০০ বিদেশীর বিরুদ্ধে। যেই ঠিকানা দিয়ে এসেছে তারা সেই ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তালিকাভুক্ত বিদেশীদের। অবৈধভাবে অবস্থান করার কারণে তারা ফরেনার্স এ্যাক্টও ভঙ্গ করেছে। ফৌজদারি অপরাধ ছাড়াও ফরেনার্স এ্যাক্টের অধীনে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হতে পারে কিংবা দেশের ভেতরে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশীদের খুঁজে বের করে আটক করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, এই ৭০০ বিদেশী অবৈধভাবে এ দেশে অবস্থান করছে। ফুটবলার, গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও পর্যটক হিসেবে বিদেশী নাগরিকরা বাংলাদেশে আসে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিজ দেশে ফিরে যায়নি। এমনকি ভিসা নবায়নও করেনি। এরপর তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিদেশী নাগরিকদের অপরাধ করার সঙ্গে সহায়তা করছে দেশীয় অপরাধী চক্রের সদস্যরা। বিদেশী নাগরিকরা অবৈধভাবে দেশে অবস্থান করে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযান পরিচালনায় অংশ নিচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, এসবি ও গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে এ ধরনের অপরাধী চক্রের অর্ধ শতাধিক বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাচার করে দিয়েছে বিদেশে। প্রায় দশটি বিদেশের সহ¯্রাধিক অপরাধী চক্রের সদস্যের তৎপরতার তালিকা তৈরি করে অভিযান পরিচালনা শুরু করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর পল্লবী থেকে ১৫ নাইজেরিয়কে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রটি আমেরিকান নারী সেনা কর্মকর্তা কিংবা ‘সুন্দরী’ নারী সেজে ভুয়া ফেসবুক আইডি বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এর আগের মাসে গত ২ জুলাই তিনজনকে এবং ২১ জুলাই ১৩ জনকে একই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। সিআইডি জানায়, প্রতিটি ঘটনায় প্রতারণার টাকা গ্রহণে ব্যবহৃত এক বা একাধিক ব্যাংক এ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম মিলে যাচ্ছে। অর্থাৎ এরা বাংলাদেশ বিভিন্ন স্থানে থাকলেও মূলত একই সংঘবদ্ধ একটি চক্র বলে তদন্তে পাওয়া গেছে বলে সিআইডির দাবি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী আফ্রিকান নাগরিক যারা আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত তারা ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে গিফট দেয়ার নামে প্রতারণামূলকভাবে নিজ নিজ দেশের সহযোগী ও ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। তাদের সহযোগীরা উল্লেখিত প্রত্যেকটি দেশে অবস্থান করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতেই অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিক প্রতারণা, ক্রেডিটকার্ড জালিয়াতি, জঙ্গী তৎপরতা, আদম পাচার, জাল ডলার ব্যবসা, মাদক পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। বিদেশী ওসব অপরাধী ইন্টারনেটে, ফেসবুক, ইমেইল, হোয়াটএ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারসহ নানা ধরনের পদ্ধতিতে প্রতারণার ফাঁদ পেতে থাকে। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেকেই লোভের বশীভূত হয়ে অনেকেই রিক্ত নিঃস্ব হচ্ছে। ওসব বিদেশী নাগরিককে সহায়তা করছে অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিছু এদেশের নাগরিক, যারা অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক এই অপরাধী চক্র। অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আফ্রিকান এসব প্রতারক বায়িং হাউসের ব্যবসার নামে এবং বিভিন্ন ক্লাবে চুক্তিভিক্তিক খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশে আসে। এরপর তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের অপরাধমূলক কাজে দেশের বাইরে থেকেও অন্য বিদেশীরাও সহায়তা করছে। একইসঙ্গে দেশীয় কিছু লোক টাকার বিনিময়ে তাদের সঙ্গে কাজ করছে। এসব প্রতারককে গ্রেফতার করে আদালতে তোলার পর জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় তারা। একবার জামিনের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে না এই অপরাধীরা। স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে যেসব বিদেশী বসবাস বা অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে কালো আফ্রিকান নাগরিক যারা তাদেরই বেশিরভাগ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আফ্রিকা অঞ্চলের কিছু মানুষ তাদের পাসপোর্ট ফেলে দিচ্ছে। এরপর তাদের অবস্থানে সহযোগিতা করছে স্থানীয় কিছু অর্থলোভী নারী-পুরুষ। শুধু তাই নয়, অপরাধেও মদদ জোগানো হচ্ছে। ধরা যদি কেউ পড়েও জামিনে বেরিয়ে ফের অপরাধে জড়াচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশী অপরাধীদের শনাক্ত করার পর তালিকা তৈরি করে ফেরত পাঠানোসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কী করণীয় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে স্পেশাল ব্রাঞ্চ কর্মকর্তার দাবি। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে অবৈধভাবে বসবাস করে ৭০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×