ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিকাণ্ডের মহড়া দুদকে

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১১ এপ্রিল ২০১৯

অগ্নিকাণ্ডের মহড়া দুদকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগুনের আগাম সতর্কতায় দুর্নীতি দমন কমিশনে মহড়া হয়েছে। হঠাৎ যখন দুদক কার্যালয়ে সাইরেন বেজে ওঠে- তখন আশপাশের লোকজনও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত দুদকেও আগুন? কিন্তু মুুহূর্তেই সেই ভুল ভাঙ্গল। সবাই নিশ্চিত হয়-এটা অগ্নিদুর্ঘটনা নয়- কেবল একটা মহড়া। বুধবার সকালে এভাবেই হয়ে গেল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশানের প্রধান কার্যালয়ের অগ্নিমহড়া। এসময় দুদকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সামনে সড়কে অবস্থান নেন। ভেঁপু বাজিয়ে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দুদক ভবনের চৌহদ্দি ছেয়ে যায় ধোঁয়ায়। এ সময় উৎসুক জনতার ভিড় জমে। তখনও তাদের প্রশ্ন কোথায় আগুন লেগেছে? কীভাবে লেগেছে? এখন কী অবস্থা? দুদক জানিয়েছে- সকালে অগ্নিকা-ের ঘটনায় করণীয় সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্নিকা-ের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। দুদক কমিশনের উদ্যোগে প্রধান কার্যালয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৭ সদস্যের একটি চৌকস দল অগ্নিনির্বাপক মহড়া পরিচালনা করে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ফগিং মেশিনের মাধ্যমে ব্যাপক কৃত্রিম ধোঁয়ার সৃষ্টি করেন। পরে কীভাবে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়- সে বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিক্ষা দেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এছাড়া অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র না থাকলে অথবা বিকল বা অপারেট করতে না জানলে কীভাবে বালু, ভেজা চট ও কম্বল বা কাঁথা ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে কৌশলও শেখানো হয়। এ মহড়ায় ফায়ার সার্ভিস দলটি ব্রোনটো কার, ফোর হুইল ওয়াটার সাপ্লায়ার ভেহিক্যাল, কমান্ড ভেহিক্যাল, এ্যাম্বুলেন্সসহ অগ্নিনির্বাপক কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, ভবনে আগুন লাগলে কোন অবস্থায়ই লিফট ব্যবহার করা যাবে না, সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে। বিদ্যুত এবং গ্যাস লাইন বন্ধ করতে হবে। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সামনের সড়কের নিরাপদ জোনে দাঁড়িয়ে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের নিরাপদ কর্মপরিবেশ বিনির্মাণে আগুনসহ সব প্রকার নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত কমিশনে একটি মাত্র নির্গমন গেট বা দরজা ছিল। ২০১৮ সালেই কমিশন একটি জরুরী নির্গমন গেট নির্মাণ করেছে। একই বছর কমিশনের দুটি ভবনের মাঝে উড়াল সংযোগ সেতু স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে কমিশনের তিনটি নির্গমন পথ রয়েছে। তিনি জানান, কমিশন ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। সব পুরনো কাগজপত্র নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। কমিশনের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ গেট নির্মাণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সিসিটিভিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। অসচেতনতা, ভবন নির্মাণে আইন না মানা, নিরাপত্তামূলক বিধি-বিধান পরিপালন না করা, এসব বিধি-বিধান নিশ্চিতকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমূহের উদাসীনতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতি এবং কিছু মানুষের দ্রুত বিত্তশালী হওয়ার মানসিকতার কারণেই বনানীর এফআর টাওয়ার কিংবা চুড়িহাট্টার মতো মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী সংস্থাসমূহে কর্মরতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আইন অনুসারে দায়িত্ব পালন করুন। কমিশন এফআর টাওয়ার নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সত্য উদ্ঘাটন হবে, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করা হবে। কেউ অপরাধ করলে আইনের আওতায় আনা হবে। আগুনের মতো জিনিস নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না।
×