ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ মিনারের ঢল ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজধানীতে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শহীদ মিনারের ঢল ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজধানীতে

ওয়াজেদ হীরা ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। আর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা শেষে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় জমায় নগরবাসী। সরকারী ছুটির দিন হওয়াতে পরিবার পরিজনকে নিয়ে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘোরেন রাজধানীর মানুষ। কর্মব্যস্ত নগরে খুঁজে ফেরেন একটু স্বস্তি। সকাল থেকেই দিনের প্রথমপ্রহরে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। পরে এই ঢল ছড়িয়ে যায় রাজধানীজুড়েই। অফিস বন্ধ থাকায় বসন্তের এমন দিনে ঘুরে বেড়ায় নগরবাসী। রমনাপার্ক, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সমাগম বাড়ে প্রচুর। বিশেষ করে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল। দলবেঁধে ঘুরতে আসে কিশোর-কিশোরীরা। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কেউ এসেছেন যেমনি তেমনি স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়েও অনেক দর্শনার্থীরা এসেছেন এই দুটি বিনোদন কেন্দ্রে। চিড়িয়াখানার বিভিন্ন প্রাণির খাঁচার সামনে গিয়ে শুধু দেখাই নয় সঙ্গে সেলফি তুলতেও দেখা গেছে। একই দৃশ্য ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেনেও। এই বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যায় বেশি দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, চিড়িয়াখানায় জিরাফ, বানর, উটপাখি, সিংহ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও পাখিদের খাঁচায় দর্শনার্থীদের ভিড় সব থেকে বেশি। এছড়াও সাপের খাঁচার সামনেও ব্যাপক জনসমাগম ছিল। চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিতেও দেখা গেছে। চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা আসিফ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আজ সব বন্ধু এসেছি। ছুটির দিনে ঘুরতে একটু ভাল লাগে। আর দিনটি বিশেষ হলে আরও ভাল লাগে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা শেষে কেউ বাসায় না ফিরে সবাই ঘুরতে এসেছে বলেও জানালেন এই শিক্ষার্থী। চিড়িয়াখানায় সবশ্রেণী ও বয়সের মানুষের উপস্থিতি ছিল। সন্তানদের চিড়িয়াখানা দেখাতে নিয়ে এসেছেন বেসরকারী চাকরিজীবী হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, আমরা সব সময় ব্যস্ত থাকি। সপ্তাহে একদিন ছুটি থাকলেও সব সময় বাইরে বের হওয়া যায় না। আজ বাচ্চাদেরও স্কুল ছুটি। বইমেলা ঘুরিয়ে এই চিড়িয়াখানায় নিয়ে এলাম। যদি কিছু শিখতে পারে। জেব্রার খাঁচার সামনে সেলফি তুলতে দেখা গেল ছয় বন্ধুকে। তাদের একজন নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে জানালেন, আমরা সবাই নিউমার্কেটে বিভিন্ন দোকানে কাজ করি। সব সময় ব্যবসার মধ্যে থাকতে হয়। ছুটি খুব মেলে না। আজ সারাটা দিন বিভিন্ন জায়গায় যেতে পেরেছি। চিড়িয়াখানায় এসে আমরা অনেক আনন্দ পেয়েছি। চিড়িয়াখানার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য ছুটির দিনের চেয়ে এদিন মানুষের চাপ ছিল প্রায় তিনগুণ। অন্যান্য দিন বিকেলের দিকে চাপ থাকলেও এদিন সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের চাপ ছিল বলে কর্মকর্তারা জানান। অন্যদিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ, বিশাল বিশাল বৃক্ষের আশপাশে দর্শনার্থীদের ঘোরাঘুরি ছিলও চোখে পড়ার মতো। বোটানিক্যাল গার্ডেনে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিত বেশি লক্ষ্য করা যায়। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থী সাবিহা বলেন, আমরা তিন বান্ধবি এসেছি। জায়গারটার অনেক নাম শুনেছি। আগে আসিনি। প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়ে ভাল লাগছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শনার্থীদের বৃক্ষরাজির শ্যামল ছায়ায় বসে গল্প করতে দেখা গেছে। এদের একজন নাম প্রকাশ না করে একুশ নিয়ে বলেন, আমাদের যে চেতনা রয়েছে তা সব সময় যেন থাকে। শুধু একদিনের জন্য যেন আমরা বেশি মাত্রায় বাঙালী না হই। মুগদার বাসিন্দা নিয়ামুল দম্পত্তি বলেন, অন্যান্য বিনোদনের যে কেন্দ্র রয়েছে তা ভাল তবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিবেশটা একটু ভিন্ন। এখানে ধুলোবালি কম, শব্দ কম, একটু গ্রামের মতোই লাগে। তাই ছুটি থাকলে আমরা এখানেই আসি। পরিবার নিয়ে গার্ডেনে বেড়াতে আসা শহিদুল আজম বলেন, বাচ্চারা বেশ উচ্ছসিত আজ। সকালে ফুল হাতে শহীদ মিনার আর এখানে এমন নিরিবিলি পরিবেশ পেয়ে একটু আনন্দ করছে। তার থ্রিতে পড়–য়া ছেলে তন্ময় বৃক্ষের নাম ও গুণাগুণ পড়ছিল। এদিকে, বইমেলা থেকে টিএসসি কিংবা শাহবাগ, রমনা কোথাও মানুষের কমতি ছিল না। শুধু পার্ক এলাকায়ই নয়, ভিড় দেখা গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিলসহ সব বিনোদন কেন্দ্রেই। ব্যস্ত নগরীতে সব সময় স্বস্তি মেলে না। তাই তো কোন উপলক্ষ পেলে নগরীর মানুষ সহজে তাকে মিস করে না। আর বিভিন্ন উপলক্ষের কারণে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো মানুষের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পায়।
×