ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গতবারের চেয়ে ২১ গুণ বেশি পোশাক রফতানি হবে

বড়দিন সামনে, আমেরিকা ইউরোপে চাহিদা বেড়েছে বাংলাদেশের পোশাকের

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

বড়দিন সামনে, আমেরিকা ইউরোপে চাহিদা বেড়েছে বাংলাদেশের পোশাকের

এম শাহজাহান ॥ বড়দিন সামনে রেখে ইউরোপ-আমেরিকার বড় ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের তৈরি পোশাক যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডই এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পোশাকের বাজারে। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড় এই ধর্মীয় উৎসব সামনে রেখে পোশাক রফতানি বেড়েছে। ইমেজ সঙ্কট কাটিয়ে পোশাক রফতানিতে এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। বড়দিন তাদের সেই স্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই উৎসবকে সামনে রেখে পোশাকের রফতানি বেড়েছে ১৯ ভাগ। নবেম্বরের শেষনাগাদ রফতানি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রচলিত এ দুই মার্কেটের পাশাপাশি ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার নতুন বাজারেও বাংলাদেশ থেকে বড়দিনের পোশাক নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, ইউরোপ-আমেরিকার পোশাক ক্রেতাদের জোট এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে দেশের পোশাক কারখানার অগ্নিব্যবস্থাপনা, ভবনের কাঠামো ও বৈদ্যুতিক সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিতে পোশাক খাতের ওপর এই দুই জোটের বরাবর চাপ রয়েছে। পোশাকের সঠিক দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিয়েও ক্রেতাদেশগুলোর সঙ্গে উদ্যোক্তাদের দরকষাকষি চলছে। এতসব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বড়দিন স্বস্তি এনে দিয়েছে এদেশের পোশাক খাতে। ইউরোপ-আমেরিকায় উৎসবের পোশাক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। তৈরিকৃত এসব উন্নতমানের পোশাক এখন ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বড়দিন সামনে রেখে পোশাক রফতানি বেড়েছে। এই উৎসব সামনে রেখে এবার ১৯-২০ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি হবে। ইতোমধ্যে তৈরিকৃত পোশাকের শিপমেন্ট শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব পোশাক ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে পৌঁছানো হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বড়দিনের সিংহভাহ পোশাক ক্রেতারা বুঝে পেয়েছেন। এ মাসের শেষনাগাদ পুরোদমে তাদের বেচাবিক্রি শুরু হবে। শুধু তাই নয়, প্রচলিত মার্কেটের পাশাপাশি নতুন বাজারগুলোতে রফতানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। কোন কোন বাজারে ৭০-৭৫ ভাগ পর্যন্ত রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আশা করছি, মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত ব্র্যান্ড বিশ্বের পোশাক ক্রেতাদের শতভাগ নজর কাড়তে সক্ষম হবে। জানা গেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ২০১৩ সালে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে পোশাকখাত। সেই সময় পোশাকের বড় ক্রেতাগোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর বাংলাদেশের রফতানির ওপর থেকে জিএসপি বা শুল্ক বা কোটামুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। একই সঙ্গে ১৬টি শর্ত সম্বলিত বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লান নামে একটি রোডম্যাপ দেয় ইউএসটিআর। এসব শর্তের সবগুলো পূরণ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসন স্থগিত জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করেনি। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করে তখন বলেছিলেন, এ ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হ্রাস পাবে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার বাজার হারাবে বাংলাদেশ। কিন্তু পোশাকের গুণগতমান বৃদ্ধি করা এবং স্বল্পদামের কারণে ক্রেতাদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়নি। তাই নানা রকম চ্যালেঞ্জ থাকার পরও গত কয়েক বছর ধরে পোশাক রফতানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এদিকে, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সার্বিক রফতানি আয় বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। আর আলোচ্য সময়ে গার্মেন্টস পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার ও ওভেন রফতানি বেড়েছে যথাক্রমে সাড়ে সাত ও ১৩ শতাংশ। আসছে মাসগুলোতেও রফতানির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তারা আশা করছে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস রফতানি সম্ভাবনার বিষয়টি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির জনকণ্ঠকে বলেন, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও গার্মেন্টস রফতানি বেড়েছে। বড়দিন সামনে রেখে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রতিবছর এ সময়টাতে রফতানি বাড়লেও এবার প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে। গত মাসে নেতিবাচত হলেও বড়দিনের কারণে এ মাসে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, পোশাকের গুণগুত মান বাড়লেও বিশ্ববাজারে পোশাকের দর বাড়ছে না। বিজিএমইএ থেকে সবসময় পোশাকের সঠিক দাম নির্ধারণের বিষয়ে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, বর্তমানে গার্মেন্টস রফতানি বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার হলেও আগামী ৫ বছর পর বা ২০২১ সালে তা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রয়েছে। এ জন্য রফতানি আরও বেশি হারে বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। এদিকে, বিজিএমইএ রফতানির জন্য কাঁচামাল আমদানির প্রাপ্যতার (ইউটিলিটি ডিক্লারেশন-ইউডি) সনদ দিয়ে থাকে। তাদের ইউডি হিসাব বলছে, আসছে মাসগুলোতে গার্মেন্টস রফতানির আদেশ গত বছরের একই সময়ের চাইতে বেশি। দেশের মোট রফতানিতে এককভাবে গার্মেন্টস খাতের অবদান ৮১ শতাংশ। ফলে গার্মেন্টস খাতের রফতানি বাড়লে তা সার্বিক রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে ২০২১ সালে পোশাক রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা চ্যালেঞ্জিং বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, এই লক্ষ্য পূরণে উৎপাদন বাড়াতে কী পরিমাণ গ্যাস, তেল ও দক্ষ জনশক্তি দরকার সে বিষয়ে সরকারকে অবহিত করতে হবে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে বড় উদ্যোক্তারা পিছিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে না। এর সঙ্গে রয়েছে কারখানার জন্য জমির সঙ্কট। তাই সরকারকে জ্বালানি ও জমির সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। এদিকে, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে তৃতীয় শীর্ষ দেশ। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাজারটিতে বাংলাদেশ ৮০ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ে তৈরি ২২৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৮ হাজার ১১২ কোটি টাকার সমান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ যায় বাংলাদেশ থেকে। নতুন বাজারে বড় সম্ভাবনা ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের বাইরে অন্যান্য দেশে তৈরি পোশাক রফতনিতে ভাল করেছে বাংলাদেশ। নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি হয়েছে তুরস্ক, জাপান ও অষ্ট্রেলিয়ায়। এছাড়া ব্রাজিলেও পোশাক রফতানি বাড়ছে।
×