ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

না’গঞ্জে ৭ খুন

কাঠগড়ায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের হাবিলদার এমদাদের হাতাহাতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাঠগড়ায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের হাবিলদার এমদাদের হাতাহাতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ, ২৪ সেপ্টেম্বর ॥ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ ম-লকে মেজর (অব) আরিফ হোসেনের আইনজীবীরা জেরা সম্পন্ন করেছেন। তারেক সাঈদের আইনজীবীর অসমাপ্ত জেরার পরবর্তী তারিখ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর। এদিকে কাঠগড়ায় প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে অপর আসামি র‌্যাবের হাবিলদার এমদাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ৭ খুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ ম-লকে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের জেরার দ্বিতীয় দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় আদালতের কাঠগড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ ম-ল আগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি থাকলেও বর্তমানে তিনি জেলার বিশেষ শাখার পরিদর্শক পদে কর্মরত। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত প্রথম দফায় একটানা তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এরপর একঘণ্টার মধ্যাহ্ন বিরতি দেয়া হলে দুপুরের খাবার নিয়ে ওই ঘটনা ঘটে। পরে আসামিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা তাদের নিবৃত করেন। দুপুর পৌনে ৩টায় পুনরায় তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা শুরু করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। বিকেল পৌনে ৫টায় জেরা শেষ হয়। মেজর (অব) আরিফ হোসেনের আইনজীবী এ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ ভূঁইয়া জেরা শেষ করার পর মামলার অন্যতম আসামি লে. কর্নেল (অব) তারেক সাঈদ মোহাম্মদের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সুলতান উজ জামান ও এ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন। তবে শনিবার তারেক সাঈদের আইনজীবীরা তাদের জেরা শেষ করতে পারেননি। বিচারক মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন ২৯ সেপ্টেম্বর। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মধ্যাহ্ন বিরতির সময় বিচারকের নির্দেশে আদালতের এজলাসের ভেতরেই আসামিদের খাবার সরবরাহ করা হয়। ওই সময় নূর হোসেনের আইনজীবী ২৩ প্যাকেট বিরিয়ানির ব্যবস্থা করেন। হাবিলদার এমদাদুল হক নিজে ২ প্যাকেট বিরিয়ানি নিজের কাছে রাখায় একজনের খাবার কম পড়ে। ওই সময় নূর হোসেন কাঠগড়ার ভেতরে থেকেই দেখেন কাঠগড়ার এক কোণায় হাবিলদার এমদাদুল হকের কাছে ২ প্যাকেট খাবার। তখন তিনি এমদাদের কাছে এর কারণ জানতে চান এবং প্রয়োজনে খাবারের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানান। এ নিয়ে হাবিলদার এমদাদের সঙ্গে নূর হোসেনের তর্ক বেঁধে যায়। তখন আকস্মিকভাবে এমদাদ নূর হোসেনকে চড় মেরে বসেন। এ ঘটনার পর নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ ও দেহরক্ষী মোস্তফা জামান চার্চিলসহ অন্যান্য আসামিরা হাবিলদার এমদাদুল হককে মারধর শুরু করে। তখন পুলিশ তাদের নিবৃত করেন। মেজর আরিফের আইনজীবীর জেরার পর লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সুলতান উজ জামান ও এ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন জেরা শুরু করেন। তবে শনিবার তারা জেরা শেষ করতে পারেননি। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন জানান, নূর হোসেনকে যারা লালন করে গডফাদার বানিয়েছে, তারাই আজকে নূর হোসেনকে ৭ খুনের দায় থেকে বাঁচানোর জন্য আদালত প্রাঙ্গণে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। নূর হোসেন যে কত বড় ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী তার প্রমাণ আজকে সে দিল নামাজের বিরতির সময় আদালতের কাঠগড়ায়। মুরগির বিরিয়ানি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নূর হোসেন তার দুই সহযোগীকে নিয়ে র‌্যাবের হাবিলদার এমদাদকে মারধর করেছে। আদালতের পিপি এ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, শনিবার মেজর আরিফ হোসেনের আইনজীবীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড থেকে নাসিকের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ ৭ জন অপহৃত হন। ৩দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর উপজেলার শান্তিরচর এলাকা থেকে ৬ জনের এবং পরদিন ১ মে একই স্থান থেকে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন, নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং এ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকারের বড় মেয়ের জামাতা ডাঃ বিজয় কুমার পাল।
×