ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোগীর মৃত্যুর পর ঢামেকে চিকিৎসকবেশী যুবককে পিটুনি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রোগীর মৃত্যুর  পর ঢামেকে চিকিৎসকবেশী  যুবককে  পিটুনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক সেজে এক যুবক এক রোগীর চিকিৎসা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেলে সুমন (২৭) নামে ওই যুবকের হাতে বিপ্লব মণ্ডল (২৬) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। ওই রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজন ও অন্য রোগীর স্বজনরা সুমনকে পিটুনি দিয়েছেন। খবর পেয়ে ঢাকা মেডিক্যালে দায়িত্বরত পুলিশ ও শাহবাগ থানার পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সুমনকে উদ্ধার করে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে নিয়ে যান। এ সময় বাইরে রোগীর স্বজনরা বিক্ষোভ করে সেøাগান দিতে থাকেনÑ সুইপার কেন চিকিৎসক, জবাব চাই, দিতে হবে। মৃত রোগী বিপ্লব মণ্ডলের বাবার নাম বিনোদ মণ্ডল। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বিনোদ মণ্ডল কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, গত রবিবার কেরানীগঞ্জে তার ছেলে বিপ্লব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়। এরপর ওই দিনই তাকে ঢামেক হাসপাতালের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। হাঁটাচলা করত। নিহতের বাবা জানান, চিকিৎসকরা আমাদের আগামীকাল (শনিবার) সকালে চলে যাওয়ার জন্যও বলেছেন। বিনোদ ম-ল জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিপ্লব অসুস্থ বোধ করলে তারা দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে ইনজেকশনের নাম লিখে দিয়ে তা দ্রুত কিনে আনতে বলেন। বিনোদ অভিযোগ করেন, তারা ইনজেকশন কিনতে যাওয়ার সময় সুমন নামের এক যুবক এসে বিপ্লবের মুখে অক্সিজেনের মুখোশ চেপে ধরেন। একটু পর সুমন নিজ থেকেই বলেন, রোগী মারা গেছেন। বিনোদ মণ্ডল আরও জানান, সুমনের গলায় চিকিৎসকের স্টেথেসকোপ ছিল। প্রথমে তারা সুমনকে চিকিৎসক মনে করেছিলেন। কিন্তু পরে ভাল করে দেখেন, ওই যুবক ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও মেঝে ঝাড়ু দিয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিকেলে যখন বিপ্লবের স্বজনরা ওই যুবককে ধরে পিটুনি দিতে থাকেন তখন খবর পেয়ে সেখানকার দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা সুমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যান। ততক্ষণে খবর পেয়ে হাসপাতালের সামনে গাড়ি নিয়ে হাজির হয় শাহবাগ থানার পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে সুমনকে ওঠানো হয়। তখন হাসপাতালের সামনে শত শত মানুষের ভিড়। রোগীর মৃত্যুর কথা জানতে পেরে উপস্থিত লোকজনও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উপস্থিত লোকজন পুলিশী বাধা এড়িয়ে ওই যুবককে গাড়ি থেকে নামিয়ে পিটুনি দিতে থাকে। তখন অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব গিয়ে মারধরকারীদের সরিয়ে দেয়। তারা সুমনকে উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়ির ভেতর নিয়ে যায়। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে অহেতুক ঝামেলা এড়াতে হাসপাতালের সামনে র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। আটক সুমন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি চার-পাঁচ মাস ধরে ঢাকা মেডিক্যালের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডবয় হিসেবে চাকরি করছেন। এক ওয়ার্ডমাস্টারের মাধ্যমে তিনি এ চাকরি পেয়েছেন। এক চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি ওই রোগীর (বিপ্লব) কাছে গিয়েছেন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নিহতের স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওয়ার্ডবয় সুমনকে আটক করা হয়। ঘটনার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওসি জানান, নিহতের স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। নিহত বিপ্লব পুরান ঢাকার মিটফোর্ডের একটি ওষুধের দোকানে কাজ করত।
×