ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল ব্যবহার নীতিমালা এক বছরেও চূড়ান্ত হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ আগস্ট ২০১৬

জ্বালানি নিরাপত্তা  তহবিল ব্যবহার নীতিমালা এক বছরেও চূড়ান্ত হয়নি

রশিদ মামুন ॥ এক বছরেও চূড়ান্ত হয়নি জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল ব্যবহার নীতিমালা। গত বছর আগস্টে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সময় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তহবিল গঠনের আদেশ দেয়। কিন্তু বছর পার হলেও তহবিলের অর্থ কি প্রক্রিয়ায় খরচ করা হবে তা নির্দিষ্ট করতে পারেনি কমিশন। দেশের ভবিষ্যত জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং জ্বালানির ঘাটতি মোকাবেলায় দেশের বাইরে এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। তহবিল ব্যবহারে প্রণীত খসড়ায় বলা হচ্ছে, এখানকার অর্থ ব্যবহার করে জ্বালানিখাতের উন্নয়নে গবেষণাও করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে শুধু দেশী গ্যাসের অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে অর্থ ব্যয় করা যায়। কিন্তু এই তহবিলটির উদ্দেশ্য আরও বিস্তৃত। এখানে তহবিল ব্যবহারের মাধ্যমে ভবিষ্যত জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। দেশে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে আর্থিক সংকট রয়েছে। সরকার চারটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এতে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এর বাইরে সরকারীভাবে দেশে এলপিজির সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই প্রকল্পের কাজও আর্থিক সঙ্কটের কারণে খুব একটা এগোয়নি। এর বাইরে তেল গ্যস অনুসন্ধানে দেশের বাইরে বিনিয়োগের তেমন সুযোগ নেই। বাপেক্স দেশের বাইরে মিয়ানমারে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও আর্থিক সংস্থানকেই বড় সমস্যা বলে মনে করা হয়। বলা হচ্ছে দেশের ৭৩ ভাগ জ্বালানি চাহিদা মেটানো হয় গ্যাস দিয়ে। দিন দিন প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অব্যাহত ব্যবহারের ফলে গ্যাসের মজুদ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। দেশের সার্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের পাশাপাশি এলএনজি আমদানি, শেল গ্যাস উন্নয়ন ও বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। বিইআরসি বলছে, আগে গ্যাসের সম্পদ মূল্য বিবেচনা করা হতো না। কিন্তু ২০১৫ তে দাম বৃদ্ধির সময় গ্যাস একটি পণ্য এর মূল্য রয়েছে বিবেচনা করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই বিবেচনায় জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আপৎকালীন তহবিল হিসেবে এই জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল গঠনের আদেশ দেয়া হয়। গত বছর ২৭ আগস্ট দাম বৃদ্ধির আদেশে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দর থেকে এক দশমিক এক টাকা নিয়ে এই তহবিল গঠন করা হয়। বিতরণ কোম্পানিগুলো কেটে রাখা অর্থ একটি পৃথক হিসেবে জমাও রখেছে। তবে এখনও সেই অর্থ ব্যবহারের কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তহবিল ব্যবহারের যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, ১ সেপ্টেম্বর ’১৫ থেকে এই তহবিল কার্যকর হয়। তহবিলের অর্থর সঙ্গে এর সুদও তহবিলে জমা রাখতে হবে। তহবিল ব্যবহারে প্রদত্ত সারচার্জ এবং অর্জিত লভ্যাংশও তহবিলে জমা রাখা হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে সদস্য নিয়ে গঠিত কমিটি প্রকল্পগুলো যাচাই বাছাই করবে। বছর অন্তর কমিশন আয় ব্যয়ের হিসেবে প্রস্তুত করে সরকার এবং অন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেবে। দেশের গ্যাস উৎপাদন যত দিন চলবে ততদিনই এই তহবিল কাজ করবে। তহবিলের অর্থে পরিচালিত প্রকল্পে ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের নীতিমালা মানতে হবে। মহাহিসাব নিরীক্ষক বছরান্তে একবার তহবিলের হিসেব নিরীক্ষা করবে এবং সরকারের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করবে। তহবিলের অর্থে যেসব প্রকল্প চলবে কমিশনের একটি কমিটি তা নিয়মিত পর্যালোচনা করবে। এর আগে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সময় ২০০৯ সালে দেখা যায় কোন কোম্পানিই লোকসান করছে না। এ সময় কেবল উন্নয়ন তহবিল গঠন করার শর্তে কমিশন ১০ থেকে ১৫ ভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে। ওই সময় তহবিলের নাম ঠিক করে দেয়া হয় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল। সরকার ২০১২ সালে ওই তহবিল ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করে গ্যাস খাতের উন্নয়ন অনুসন্ধানে এই অর্থ ব্যয় করছে। গ্রাহকের দেয়া বিপুল অর্থে ওই তহবিল গড়ে উঠেছে এখন গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দিয়েই বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। এর বাইরে বিইআরসি বিদ্যুত উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছে। সেখানেও বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা পড়েছে। পিডিবি এই অর্থ দিয়ে একটি ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এখন পিডিবির বিশেষ কিছু প্রকল্পেও এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
×