
ছবি: লেখকের সৌজন্যে
আমি বাংলাদেশের নাগরিক, বর্তমানে ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিসিআর ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ নিয়ে আন্ধ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি নিয়ে মাস্টার্স পড়ছি। পরিবার-পরিজন, চেনা পরিবেশ ছেড়ে ভিনদেশে ঈদ উদযাপন—এই অনুভূতি সত্যিই অনন্য মধুর এবং সেই সাথে বিষাদময়। ঈদ মানেই আমাদের কাছে ঘরে ফেরা, প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি, শৈশবের স্মৃতি আর মিলেমিশে একাকার হওয়া। কিন্তু এবার ঈদ কাটলো সহপাঠী, বন্ধু ও নতুন পরিবেশের মাঝে।
এই ভিন দেশেও পেয়ে গেলাম ঈদ উদযাপনের দাওয়াত সুদূর হায়দারাবাদ থেকে। চলে গেলাম পার্ফর্মিং আর্টস নিয়ে মাস্টার্সরত বিপু ভাইয়ের দাওয়াতে তাদের ক্যাম্পাস সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব হায়দারাবাদ এ।
ঈদের দিন সকালে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খোলা আকাশের নিচে সবাই মিলে ঈদের নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টিমুখ—সবকিছুতেই ছিল আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্য। যদিও পরিবারের অভাব অনুভূত হয়েছে, তবু নতুন বন্ধুদের সাথে একসাথে বসে খাওয়া, গল্প করা, দেশের কথা স্মরণ করা—সব মিলিয়ে এক ধরনের পরিবার-পরিবেশ তৈরি হয়েছিল আমাদের মাঝে।
নামাজ শেষে বিপু ভাইয়ের তৈরি সেমাই আর আমাদের বাংলাদেশী অন্যান্য বন্ধুরা মিলে রান্না করা হলো মাটন, পোলাউ- আর হয়ে গেল আমাদের ঈদ উল আজহার ছোট্ট জমজমাট আসর।
ঈদ মানে শুধু উৎসব নয়, বরং ত্যাগ, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতির শিক্ষা। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই, ঈদের আনন্দ শুধু নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবো না; আশেপাশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের জন্যও কিছু করবো। তাই সকলে মিলে কিছু খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে স্থানীয় কিছু অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করি। এতে ঈদের আনন্দ যেন আরও গভীর হয়েছিল।
বিদেশে থেকে ঈদ উদযাপন আমাকে শিখিয়েছে, ঈদের মূল সৌন্দর্য মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধে। পরিবার ছাড়া ঈদ কাটানো কঠিন হলেও, নতুন পরিবেশে নতুন বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা ও মানবিকতার বন্ধন—সবকিছু মিলিয়ে এই ঈদ আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
কাজী আশিকুর রহমান সুজন,এমএসসি বায়োটেকনোলজি, আন্ধ্রা ইউনিভার্সিটি (২০২৩-২০২৪)
সাব্বির