ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বের সবচেয়ে নিঃশব্দ ঘর: যেখানে নিজের হৃদস্পন্দন শুনতে পান মানুষ

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১ জুন ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে নিঃশব্দ ঘর: যেখানে নিজের হৃদস্পন্দন শুনতে পান মানুষ

ছবিঃ সংগৃহীত

মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপলিস শহরে অবস্থিত অরফিল্ড ল্যাবরেটরিজের অ্যানেকোইক চেম্বারকে ধরা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে নীরব ঘর হিসেবে। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর, এই ঘরের নীরবতা মাপা হয় -২৪.৯ ডেসিবেল, যা প্রকৃতির যেকোনো স্থানের চেয়েও বেশি নীরব এবং এমনকি অনেক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রেরও পরিমাপের ক্ষমতার বাইরে।

এই ঘরে ঢুকলে আপনি আপনার হৃদয় স্পন্দন, রক্ত প্রবাহ, ফুসফুসের শ্বাস নেওয়া পর্যন্ত শুনতে পারেন। বেশিরভাগ মানুষই সেখানে কয়েক মিনিটের বেশি সহ্য করতে পারেন না।

ঘরটি কীভাবে তৈরি?

এই চেম্বারটি সাধারণ কোনো ঘর নয়। এটি দুটি পুরু কংক্রিট এবং স্টিলের স্তরের মধ্যে তৈরি। বাইরের দেয়ালগুলো ভারী ইস্পাত এবং ইটের তৈরি, আর ভেতরের ছোট ঘরটি বসানো হয়েছে কম্পন শোষণকারী স্প্রিংয়ের উপর, যাতে বাইরের কোনো আওয়াজ ভেতরে প্রবেশ না করতে পারে। ঘরের প্রতিটি দেয়াল ও মেঝে ঢেকে রাখা হয়েছে বড় বড় ত্রিকোণ আকৃতির কাঁচের তন্তুর প্যানেল দিয়ে, যেগুলো শব্দ শোষণ করে ফেলে।

ঘরের মেঝেটিও আসলে ঝুলন্ত জাল-মেশের মতো, যাতে নিচ থেকে শুরু করে প্রতিটি পৃষ্ঠ শব্দ প্রতিফলিত করতে না পারে। এই ঘরটি ছোট একটি শোবার ঘরের আকারের, কিন্তু এর নীরবতা অসীম মনে হয়।

মানব দেহে এর প্রভাব কী?

এই ধরনের ঘর সাধারণত ব্যবহার করা হয় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায়, বিশেষত যেখানে কোনো পণ্যের শব্দ মাত্রা নির্ভুলভাবে মাপা জরুরি। তবে এই অতিমাত্রার নিস্তব্ধতা মানুষের মনে অস্বস্তি তৈরি করে।

ডঃ দীপ্তি সিনহা, ENT বিশেষজ্ঞ (CK বিড়লা হাসপাতাল, দিল্লি) জানান, “এই রকম নিঃশব্দ পরিবেশে মানুষ তাদের শরীরের ভিতরের আওয়াজ শুনতে শুরু করে—হৃদস্পন্দন, রক্ত সঞ্চালন, ফুসফুসের প্রশ্বাস, এমনকি হাড়ের আওয়াজ পর্যন্ত।“

অনেকেই জানান, তারা এতে মাথা ঘোরা, দিশেহারা হওয়া, এমনকি হ্যালুসিনেশন বা ভ্রম অনুভব করেন। এজন্যই কেউই বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না; রেকর্ড অনুসারে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সময় এই ঘরে কাটিয়েছেন মাত্র ৪৫ মিনিট।

এর ব্যবহারিক গুরুত্ব

এই ঘরটি যদিও অস্বস্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু এটি বিমান শিল্প, টেলিকমিউনিকেশন, এবং অডিও ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো যন্ত্র কিংবা পণ্যের শব্দ নির্ভুলভাবে পরীক্ষা করতে হলে এমন একেবারে নিঃশব্দ পরিবেশ প্রয়োজন।

ডঃ সিনহা বলেন, “এই ধরনের ঘর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কতটা শব্দ নির্ভর। শব্দ শুধু তথ্য নয়, আমাদের ভূমিতে সংযুক্ত থাকার অনুভূতি দেয়।”

সূত্রঃ দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস 

নোভা

×