ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরে কী হয়? 

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১০ জুন ২০২৫

প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরে কী হয়? 

ডিমকে বলা হয় ‘পুষ্টির ভাণ্ডার’। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ভিটামিন, ভালো ফ্যাট ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। কিন্তু এত গুণের মাঝেও ডিম নিয়ে বিতর্ক থেকেই যায়, বিশেষ করে কোলেস্টেরল নিয়ে। অনেকেই ভাবেন, প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়? আবার কেউ মনে করেন, এটি পেশি গঠনে সহায়ক। চলুন, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের আলোকে জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিন ডিম খাওয়ার বাস্তব প্রভাব।

পেশি গঠনে সহায়ক ডিম

ডিম প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি শরীরের পেশি গঠনে এবং তা টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিমে থাকে প্রোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, কোলিন, সেলেনিয়াম ও বি ভিটামিন, যা মাংসপেশির বৃদ্ধিতে কার্যকর। নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে প্রতিদিন একটি বা দুটি ডিম খাওয়া পেশিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে এই প্রভাব ব্যক্তিভেদে ও অন্যান্য খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে।

দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি হ্রাসে উপকারী

ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে। এই স্ট্রেসের ফলে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেলে এসব রোগের ঝুঁকি কমে যায়। তবে যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি, তাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

শরীরে প্রদাহ কমায়

গবেষণা বলছে, ডিমে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরের প্রদাহজনিত লক্ষণ কমাতে পারে। ডিম খাওয়া মানুষের শরীরে প্রদাহের নির্দেশক বায়োমার্কারগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, ডিমের প্রায় সব পুষ্টিগুণই কুসুমে থাকে। শুধু সাদা অংশ খেলে একই উপকার পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, আবার ক্যালোরি কম। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে তা দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা সকালের নাশতায় ডিম খেতেন, তাদের ক্ষুধার হরমোন গ্রেলিনের পরিমাণ কমে এবং সারাদিনে তারা কম খাবার খেতেন, তুলনামূলকভাবে যারা ওটমিল খেতেন তাদের চেয়ে।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে

ডিম ও হৃদরোগ নিয়ে গবেষণায় মিশ্র ফলাফল পাওয়া গেছে। কিছু গবেষণা বলছে, নিয়মিত ডিম খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না। বরং একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন একটি ডিম খেলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে যাদের হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে বা কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের জন্য প্রতিদিন ডিম খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

কোলেস্টেরল নিয়ে দুশ্চিন্তা কতটা যৌক্তিক?

একটি বড় ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, যা মূলত কুসুমে থাকে। যদিও সাম্প্রতিক অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম খাওয়া ও রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বেড়ে যাওয়ার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবু যাদের কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি, তাদের ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি।

ডিম খাওয়ার একটি ইতিবাচক দিক হলো, এটি শরীরে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত ডিম খাওয়া কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে বলেও গবেষণায় দেখা গেছে।

ডিমের পুষ্টিগুণ এক নজরে

একটি বড় ডিমে থাকে:

ক্যালোরি: ৭৪

প্রোটিন: ৬ গ্রাম

ফ্যাট: ৫ গ্রাম

কোলেস্টেরল: ২০৭ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়াম: ২৪ মিলিগ্রাম

কোলিন: ১৬৯ মিলিগ্রাম

ভিটামিন এ: ৯১ মাইক্রোগ্রাম

ভিটামিন ডি: ৫০ মাইক্রোগ্রাম

যদি কোলেস্টেরল কমাতে হয়, তাহলে শুধুমাত্র ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যেতে পারে। একটি ডিমের সাদা অংশে থাকে ১৯ ক্যালোরি, ৪ গ্রাম প্রোটিন এবং কোনো কোলেস্টেরল নয়।

কারা প্রতিদিন ডিম খেতে পারবেন না?

যাদের উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতার ঝুঁকি আছে, তাদের প্রতিদিন ডিম খাওয়া নিরাপদ নাও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই লাখ প্রবীণ সেনা সদস্য নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ডায়াবেটিস বা স্থূলতা নিয়ে ভুগছেন এবং প্রতিদিন ডিম খান, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোলেস্টেরলের ঝুঁকিও বেড়ে যায়, ফলে বয়স্কদের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

প্রতিদিন কতটি ডিম খাওয়া নিরাপদ?

সাধারণভাবে স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা প্রতিদিন এক থেকে দুটি ডিম খেতে পারেন। তবে যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি আছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একটি ছোট গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন তিনটি ডিম খাওয়াও নিরাপদ হতে পারে এবং এটি ভালো (HDL) ও খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে এ বিষয়ে আরও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন।

আরও এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে দুই থেকে সাতটি ডিম খান, তাদের HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে।

ডিম একটি পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার। এটি প্রোটিন, ভালো ফ্যাট, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে শরীরকে শক্তি দেয় এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে ডিমের কুসুমে থাকা কোলেস্টেরল নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি আছে। আপনার শরীর, খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যগত ইতিহাস অনুযায়ী প্রতিদিন কতটি ডিম খাওয়া নিরাপদ হবে, সে সিদ্ধান্ত নিন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/52wkeeu

আফরোজা

×