
গাজর আর আদা দুইটিই আলাদা করে স্বাস্থ্যকর, আর একসঙ্গে হলে যেন প্রাকৃতিক ওষুধ! প্রতিদিন গাজর-আদার রস পান করলে শরীরের ভেতর ঘটে যেতে পারে বেশ কিছু চমকপ্রদ পরিবর্তন। হজমশক্তি বাড়া থেকে শুরু করে ত্বকের উজ্জ্বলতা, ওজন নিয়ন্ত্রণ কিংবা হৃদ্যন্ত্রের সুরক্ষা সবখানেই থাকতে পারে এই রসের অবদান।
গবেষণা বলছে, গাজর আর আদার রসে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, আর কাজ করে এক শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে।
আদা অনেক আগে থেকেই হজমে সহায়ক একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি অন্ত্রে থাকা উপকারী জীবাণুগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করে, যার প্রভাব পড়ে সারা শরীরে। এমনকি স্বল্প মেয়াদে আদার রস খাওয়ার অভ্যাসও অন্ত্রে জীবাণুর বৈচিত্র্য ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে।
এ ছাড়া বমিভাব বা গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা কমাতেও আদা কার্যকর। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য বিশেষ করে হজমপ্রক্রিয়ায় উপকার দেয়।
রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ে
আদায় রয়েছে জিঞ্জারল, শোগাওলস, প্যারাডল ও জিঞ্জারোন নামের কিছু উপাদান, যেগুলো দেহের কোষকে রোগ থেকে রক্ষা করে। এসব উপাদান একসঙ্গে কাজ করে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব ফেলতে।
অন্যদিকে, গাজরের মধ্যেও রয়েছে ফ্যালকারিনল ও ফ্যালকারিনডিওল নামের প্রাকৃতিক যৌগ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন একটি শক্তিশালী ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কোষের প্রদাহ কমিয়ে শরীরকে রাখে রোগমুক্ত।
ত্বকে আসতে পারে নতুন উজ্জ্বলতা
গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। নিয়মিত গাজর খাওয়া বা গাজরের রস পান করলে শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্তর বাড়ে, যা ত্বকের কোষকে সুরক্ষা দেয়। পাশাপাশি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষায়ও এটি সহায়তা করে।
তবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে স্থায়ী নয়, কারণ রোগ বা চাপের কারণে এগুলো দ্রুত ভেঙে যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় গাজর-আদার রসের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার রাখা জরুরি।
ওজন কমাতে পারে সহায়ক
শুধু গাজর আর আদার রস খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব নয়, তবে এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আদা খেলে শরীরের ওজন ও কোমর-নিতম্বের অনুপাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এ দুটি বিষয় আবার হৃদ্রোগের ঝুঁকির সঙ্গেও জড়িত।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের শরীরে rs4445711 নামের জিন ভেরিয়েন্ট রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে গাজর বেশি উপকারী হতে পারে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। এই প্রভাব অন্য সবজির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
হৃদ্যন্ত্র থাকবে সুরক্ষিত
একটি ছোট গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন প্রায় ২ কাপ গাজরের রস পান করেছেন, তাঁদের রক্তচাপ কমেছে এবং শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেড়েছে। যদিও রক্তে চর্বির মাত্রায় খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি, তবে হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতায় এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ।
আদাও হৃদ্রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এতে থাকা উপাদানগুলো রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমাতে, এমনকি রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কমাতেও সহায়ক, যা ওষুধের মতো কাজ করে কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।
কবে খাবেন এই রস?
গাজর-আদার রস পান করার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। সকালের দিকে খালি পেটে খেতে পারেন, আবার কেউ কেউ দুপুরে খাবারের সঙ্গে কিংবা বিকেলে স্ন্যাক্স হিসেবে পান করতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে—খাবারটি যেন শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে।
হতে পারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যাঁরা প্রথমবার গাজর-আদার রস খাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি হতে পারে। আদা কিছুটা তীব্র প্রকৃতির, তাই বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে আদার পরিমাণ কমিয়ে তাতে হলুদের মতো উপাদান যোগ করে নেওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন অতিরিক্ত গাজরের রস খেলে ত্বকে সাময়িকভাবে হলদে-কমলা রঙের একটা আভা আসতে পারে, যাকে বলে ক্যারোটিনেমিয়া। এটি ক্ষতিকর না হলেও চোখে পড়ার মতো।
কারা খাবেন না?
যাঁরা রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খান, তাঁদের জন্য আদা বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ আদা নিজেই রক্ত পাতলা করার প্রাকৃতিক গুণ রাখে, যা ওষুধের সঙ্গে মিলে গিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রতিদিন গাজর আর আদার রস খাওয়ার অভ্যাস আপনার শরীরের জন্য হতে পারে এক নতুন শুরু। হজমে সহায়ক, রোগ প্রতিরোধে শক্তি জোগায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় আর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। সঙ্গে পায় হৃদ্যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এই রস তখনই উপকারী যখন তা খাওয়া হয় পরিমাণ বুঝে এবং নিয়ম মেনে।
এক গ্লাস প্রাকৃতিক রস, প্রতিদিন স্বাস্থ্য সচেতনতায় এক কার্যকর পদক্ষেপ।
সূত্র:https://tinyurl.com/4bm2pppb
আফরোজা