
ছবিঃ সংগৃহীত
লিভারের প্রধান কাজ হলো হজম ও পুষ্টি প্রক্রিয়ায় সহায়তা, তাই লিভারের সমস্যা হলে শরীর নানা উপায়ে সংকেত দেয়। তবে সাধারণ লক্ষণ বলে ধরলে প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ শনাক্ত করা কঠিন। নিচে আটটি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যা অনেকে গুরুত্ব দেয় না—কিন্তু সময়মতো নজর দিলে ভবিষ্যতে বড় চিকিৎসা ঝুঁকি কমানো যায়।
১. হঠাৎই ওজন কমে যাওয়া
যদি আপনি ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই হঠাৎ ওজন হারান, তবে এটা সতর্কতার সংকেত। যেহেতু লিভার পুষ্টির শোষণ কমায়, তাই শরীর দ্রুত শক্তি হারায় এবং ওজন কমে যায়।
২. খাবারের প্রতি অনীহা বা অন্নগ্রহন কমে যাওয়া
যন্ত্রণার শুরুতে অল্প খাবারেও পরিপূর্ণতা অনুভূত হয়—যাকে বলা হয় “early satiety”। এটি হজমে বাধা সৃষ্টি করে, লিভারের সমস্যার সাবধানবার্তা।
৩. উদরের উপরের ডান দিকে ব্যথা
লিভারের তলায় বা ডান দিকে ধড়মড় বা তীব্র ব্যথা হতে পারে, যা অনেকেই সাধারণ পেটব্যথা হিসেবে উপেক্ষা করেন।
৪. বমি বা বমিভাব
যখন লিভার ঠিকমতো কাজ করে না, হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়— যার ফলে বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৫. অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা
স্বাভাবিক ক্লান্তির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিহীনতা থাকে, যা বিশ্রামের পরও যায় না। শরীর ক্যান্সার প্রতিরোধে লড়াই করায় ক্লান্তি বেশি পরিশ্রমী থেকেও চলে না।
৬. জন্ডিস (চোখ ও ত্বক দেহে হলদেটে ভাব)
যকৃত বিলিরুবিন পরিশোধনে ব্যর্থ হলে চোখের সাদা অংশ ও ত্বক হলদে ছাপ পড়ে। এছাড়া কার্যকরীতে কমে গেলে গা খচখচ করে, প্রস্রাব ডার্ক ও মল ফর্সা হতে পারে।
৭. অ্যাসাইটিস ও শরীর ফুলে যাওয়া
লিভারের পরিস্থিতি খারাপ হলে উদরের মধ্যে তরল জমে যায়, যা পেট ফুলে ও ভারি অনুভূতি দেয়। পাশাপাশি পায়ে ফোলা আসতে পারে।
৮. যেমন একটা মোটা দানা বা গুটি অনুভূতি
যদি রাইব–এর ডান দিকে ডাক দিয়ে অনুভব করেন কোনো দানা বা শরীরের মধ্যে গঠিত কষাশক্তি, সঙ্গে যকৃত বা তিল্লির অসাধারণ বৃদ্ধি দেখা যায়—এতে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।
অন্যান্য লক্ষণসমূহ
চামড়া অতিরিক্ত চুলকানো
অস্পষ্ট কারণেই জ্বর
সহজে রক্তপাত বা চোটে বেশি রক্ত পড়া শুরু হওয়া
কেন এই লক্ষণগুলো উপেক্ষিত হয়?
অনেক সময় এগুলো সাধারণ বদহজম, চাপ বা সংক্রমণের লক্ষণ মনে করে শেষ পর্যন্ত ডাক্তার দেখানো হয় না। তবে দেরিতে শনাক্ত হলে ক্যান্সার আগ্রাসী হয়ে ওঠে। তাই যেকোনো সন্দেহ উঠলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শুরুতে শনাক্ত করলে চিকিৎসার সম্ভাবনা বাড়ে।
আপনার করণীয়:
যদি উপরের যেকোনো উপসর্গ থাকে—তাহলে ল্যাব টেস্ট (যেমন: α‑fetoprotein), আলট্রাসাউন্ড কিংবা CT/MRI—এর মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
ক্যান্সার বা লিভারের অন্য কোনো গঠনগত পরিবর্তন থাকলে, আগে জানলে রেডিকেল বা ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে সম্যকভাবে চিকিৎসা শুরু করা যায়।
গুরুত্বহীন মনে হলেও, “স্বাভাবিক না হওয়া লাল পতাকা” যেমন: হঠাৎ ওজন কমা, শরীর ফুলে যাওয়া, অকারণে ক্লান্তি বা যকৃতের এলাকায় ব্যথা—এই সব লক্ষণ লক্ষ করে ডাক্তার দেখানো বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ যকৃত ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে যখন শনাক্ত হয়, তখন সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আপনার বা আপনার পরিচিত কারো এই লক্ষণগুলো থাকলে, চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন—যত দ্রুত সম্ভব। স্বাস্থ্যই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
সূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া
নোভা