
ছবি:সংগৃহীত
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ঈদ পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা এবং নানা ধরনের ‘এজেন্ট’ হিসেবে ট্যাগিং প্রসঙ্গে কথা বলেন। আলোচনার শুরুতে উপস্থাপক উল্লেখ করেন, বাঁধন অভিনীত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র ‘খুফিয়া’–তে তিনি এক ‘র’ (RAW) এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় এবং এক জামাত নেতা হত্যার পরিকল্পনা করে। উপস্থাপকের মন্তব্যে বাঁধনের প্রতি ইঙ্গিত ছিল যে, বাস্তব জীবনেও তিনি এমন নানা ট্যাগের মুখোমুখি হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন,
“২০২৩ সালে খুফিয়া সিনেমাটি করার পর থেকেই আমাকে বলা শুরু হয় আমি র’ (RAW)-এর হয়ে কাজ করছি। এরপর যখন জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের সাথে রাস্তায় নেমে আসি, তখন বলা হলো আমি সিআইএ (CIA)-এর এজেন্ট। এইসব কথা কেউ সামনাসামনি না বললেও ফেসবুকের ইনবক্স আর কমেন্টে সারাক্ষণ লেখা হতে থাকে।”
তিনি বলেন,
“অনেকেই বলেছে আমি ইউএসএ আইডি ব্যবহার করে বহু ডলার নিচ্ছি। এরপর আবার শোনা গেল আমি মুসাদ (Mossad)-এর এজেন্ট। সবশেষে যখন আমি জামাতের আমিরের একটি বক্তব্য, যা আমি মানবিক মনে করেছিলাম, তা শেয়ার করলাম, তখন বলা হলো আমি জামাতের সিক্রেট এজেন্ট!”
বাঁধনের ভাষ্য অনুযায়ী,
“একটার পর একটা ট্যাগ দিয়ে আমাকে সাজানো হচ্ছে—র’, সিআইএ, মুসাদ, জামাত… এমনকি বিএনপিরও। আমি তো নিজের কাজটা করি। কিন্তু আমাকে এজেন্ট বানাতে এরা পিছু ছাড়ে না, 'র' এর এজেন্টরা এখনো থেকে গেছে।”
তিনি আরও বলেন,
“আমার ঘনিষ্ঠ অনেক মানুষ আমাকে বলেছে, তুমি এত ভালো এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেছো যে, সবাই সত্যি ভেবে ফেলেছে তুমি সত্যিকারের এজেন্ট। আমি নিজেও অবাক হয়ে যাই, কোথা থেকে এইসব আসে!”
সামাজিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন,
“জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আমরা যারা অংশ নিয়েছিলাম, আমরা ছিলাম এক মহাসমুদ্রের এক ফোঁটা। কিন্তু এই এক ফোঁটার কারণেই আমার ব্যক্তিগত জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমি অনেক বন্ধু হারিয়েছি, আত্মীয় হারিয়েছি। যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পাশে থেকে শুধু সুবিধা নিয়েছে, তারা কখনো ভাবতেই পারে না কেউ নিজের স্বার্থ ছাড়িয়ে দেশের মানুষের জন্য বুলেটের সামনে দাঁড়াতে পারে।”
তিনি যোগ করেন,
“এই সমাজে যারা দেশের জন্য ভাবে না, তাদের কাছে এটাই স্বাভাবিক যে সবাই নিজের সুবিধার জন্যই কিছু করে। যারা কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, যারা মানুষের জন্য ভাবে না, তারা পেছনে বসে কমেন্ট করে—কে কিসের এজেন্ট। এটা তাদের সীমাবদ্ধতা।”
সেই সঙ্গে বাঁধনের বার্তা,
“প্রথমে খুব খারাপ লাগতো, ভয়ও লাগতো। কিন্তু এখন আমি মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্ত। এই চ্যালেঞ্জগুলো মানুষকে গড়ে তোলে। পরবর্তী প্রজন্মকে বলব, ট্যাগিংয়ের ভয় না পেয়ে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে শিখো। কারণ, এই ট্যাগারদের জয়ী হতে দেওয়া যাবে না।”
ছামিয়া