
নবজাতককে পথেঘাটে ফেলে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে
নবজাতককে পথেঘাটে ফেলে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এই চিত্র দেশের প্রতিটি এলাকার। এসব শিশু কখনো মৃত কখনো জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়। সামাজিক এই অবক্ষয় থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন সুধীজন ও বিজ্ঞজন। হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামাজিকভাবে এই সমস্যার সমাধান বের করা করা দরকার এমনটি বলছেন একজন মনোস্তত্ত্ববিদ। নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে এক নারী বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারুণ্যের আসক্তিতে সম্পর্কের সৃষ্টি হয়ে আবেগের প্রবণতায় বাস্তবতার বাইরে চলে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অঘটন ঘটায়।
সামাজিক অবক্ষয়ে বিয়ের আগে নারী ‘সিঙ্গল মাদার’ হয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসব নবজাতককে বলা হয় সারোগেসি বেবি বা সারোগেট বেবি। (সহবাস বা সহমিলন ছাড়াও স্পার্ম ব্যাংকের মাধ্যমে সারোগেসি বেবি নিয়ে সিঙ্গল মাদার হওয়া যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ব্যবস্থা আছে। যা আমাদের দেশে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নিষিদ্ধ)।
বগুড়া নগরীর কয়েকটি ঘটনা। ১.সন্ধ্যা রাতে কান্নারত এক নবজাতককে দেখতে পায় পথচারী। ৯৯৯ এ খবর দেওয়া হয়। উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হয়। খোঁজখবর করে নবজাতকের পরিচয় (মা বাবা) পাওয়া গেল। তাদের বিয়ে হয়নি। ঘটনায় অভিভাবকগণের সম্মতিতে বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। ২. একটি কলেজের কাছে রাতে কাঁথায় মোড়ানো এক নবজাতককে উদ্ধার করে নৈশপ্রহরী। পুলিশে খবর দেওয়ার পর হাসপাতালে পাঠানো হয়। অভিভাবক পাওয়া না গেলে দিন কয়েক পর বগুড়া এসওএস শিশু পল্লীতে পাঠানো হয়। সেখানে সে বেড়ে উঠছে। ৩.শহরের উপকণ্ঠে এক নবজাতককে পাওয়া গেল মৃত অবস্থায়। থানায় সাধারণ ডায়েরির পর দাফন করে আঞ্জুমানে মুফিদুল।
বগুড়া সরকারি মজিবর রহমান মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. ত্বাইফ মামুনের কথাÑ বড় সামাজিক অবক্ষয় ভ্রƒণ হত্যা, নবজাতক ফেলে দেওয়া। কখনো শিশু হত্যা। যা সমাজকে বিপন্ন করে তুলেছে। এই ঘুণপোকা জরুরিভাবে দূর করা দরকার। পরিত্যক্ত জীবিত ও মৃত শিশু পাওয়া যাচ্ছে কখনো পাড়া মহল্লার কোনো বাড়ির বারান্দায়, আশপাশের ঝোপঝাড়ে, পুকুর ও জলাশয়ের ধারে হাসপাতালের ডাস্টবিনে, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে, কোনো জমির ভিতরে, স্কুলের বারান্দায়, কক্ষ খোলা থাকলে বেঞ্চের ওপর। নির্জন জায়গাগুলোতে নবজাতককে ফেলে রাখা হয় রাতে।
খুবই অমানবিক এবং স্পর্শকাতর এই ঘটনাগুলো কেন ঘটছে তার গভীরে যাওয়া হয় না। প্রতিরোধে সামাজিক এবং ইনস্টিটিউশনাল কোনো ব্যবস্থা নেই। সকলে দায় এড়াবার চেষ্টা করে। দোষ দেওয়া হয় মেয়েকে। গোপনে পরিকল্পিতভাবে নবজাতককে ফেলে রাখা হয়। আবার বিষয়টি (প্রেগনেন্সি) শুরুতে টের পাওয়া গেলে গোপনে কোনো ক্লিনিকে গিয়ে এ্যাবরশন করা হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের কয়েকটি ছোট্টমণি নিবাসের এক পরিসংখ্যানে জানা যায় গত পাঁচ বছরে পরিত্যক্ত প্রায় ১১ হাজার শিশু আশ্রয় পেয়েছে। পরিচয়হীন মৃত নবজাতকের ময়নাতদন্তের পর আঞ্জুমানে মফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়। তবে ডিএনএ টেস্ট হয় না। কারণ মৃত নবজাতকের প্রকৃত মা বাবার পরিচয় পাওয়া যায় না। ঢাকা মহানগরীতে পরিত্যক্ত শিশু বা নবজাতক জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেলে পুলিশের ওম্যান সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে দেওয়া হয়।
ঢাকার বাইরে পরিত্যক্ত নবজাতককে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি কোনো নিবাসে পাঠানো হয়। সেখানে তারা বেড়ে ওঠে। দেশে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এই বিষয়ে কাজ করছে। আবার নিঃসন্তান অনেক মা বাবার ঘরেও তাদের আশ্রয় হয়। পরিত্যক্ত অবস্থায় জীবিত যে নবজাতক পাওয়া যায় তাদের বয়স এক থেকে দুই দিন কখনো এক বছরের মধ্যে। ক’দিন আগে ঢাকায় এক রিকশাচালক দুই বছরের এক শিশুকে পেয়ে পুলিশের কাছে পৌঁছে দেয়।
একজন সমাজবিজ্ঞানী জানান, এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে জৈবিক শিক্ষা (সেক্স এডুকেশন) চালু করা দরকার। যুক্ত দেখান সনাতনী সমাজ থেকে মানুষ আধুনিক সমাজে প্রবেশ করেছে। নৈতিকতার মূল্যবোধকে আধুনিক সমাজ উপযোগী করার সময় এসেছে। সারোগেসি বেবির দায়িত্ব নেওয়া উচিত। অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নেওয়া দরকার।