ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইউরোপের খ্রিস্টান-প্রধান দেশটির এক শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৮ জুন ২০২৫

ইউরোপের খ্রিস্টান-প্রধান দেশটির এক শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম শিক্ষার্থী

ছবি: সংগৃহীত

ভিয়েনার ইতিহাসে এই প্রথম, শহরটির প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে জাতিগত অস্ট্রিয়ান শিক্ষার্থীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে চলেছে। নতুন এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মুসলিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন শহরের অন্যান্য সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি।

ভিয়েনার স্কুল কাউন্সিলের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ৪১.২ শতাংশ নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়েছে, যেখানে ৩৪.৫ শতাংশ খ্রিস্টান বলে জানিয়েছে।

পরিসংখ্যান আরও জানায়, অনেক শ্রেণিকক্ষে জার্মান ভাষা এখন দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং একীভবন, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা ও শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

এই তথ্য ভিয়েনার শিক্ষা কাউন্সিলর বেটিনা এমারলিং (নিওস)–এর কার্যালয়ের তৈরি করা, যা প্রায় ১,১২,৬০০ শিশু শিক্ষার্থীকে নিয়ে করা হয়েছে—যারা প্রাথমিক, মাধ্যমিক, বিশেষ শিক্ষা এবং পলিটেকনিক স্কুলে অধ্যয়নরত।

এমারলিং বলেন, “ভিয়েনায় এমন জীবনধারা গ্রহণ করা চলবে না, যা ধর্মীয় গ্রন্থের নারীবিদ্বেষী, সংখ্যালঘুবিরোধী, রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী মৌলবাদী ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “গণতন্ত্র, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সবার জন্য এক অভিন্ন ভিত্তিতে শেখানো উচিত।” এজন্য তিনি নিওস দলের শিক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টোফ ভিডারকেয়ার-এর প্রস্তাবিত নতুন পাঠ্যক্রমে এ ধরনের একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান।

অস্ট্রিয়ার প্রধান বিরোধী দল, ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টি (এফপি), এই পরিবর্তনের কড়া সমালোচনা করেছে। দলটির যুব শাখার প্রধান ম্যাক্স ওয়েইনজিয়েরল বলেন, “৪১.২ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থী—এটা আর সংখ্যালঘু নয়, এটা এখন নতুন সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রূপ নিচ্ছে। এটা আর অভিবাসন নয়, এটা বাস্তুচ্যুতি।” এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

এফপি-র নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র হান্নেস আমেসবাওয়ারও সতর্ক করে বলেন, “খুব শিগগিরই অস্ট্রিয়ানরা নিজেদের দেশেই পরবাসী হয়ে যাবে।”

শিক্ষক ও অভিভাবক সংগঠনগুলোও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তাদের মতে দ্রুত জনমিতিক পরিবর্তনের ফলে শ্রেণিকক্ষে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়েছে। অস্ট্রিয়ান অভিভাবক সংগঠনের সভাপতি এভেলিন কোমেটার বলেন, “একটা বাক্য শিক্ষার্থীদের বোঝাতে শিক্ষকের ১০ থেকে ১২ বার করে বলতে হচ্ছে।”

খবরে আরও বলা হয়, ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় শিক্ষকরা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন এবং জাতিগত অস্ট্রিয়ান পরিবারগুলো শহর ছেড়ে গ্রামীণ এলাকায় চলে যাচ্ছে—যেখানে এখনো জার্মান ভাষাই প্রধান এবং শ্রেণিকক্ষে সহিংসতার ঘটনা কম।

এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় শিক্ষা কর্মকর্তারা “গণতন্ত্রে বসবাস” শীর্ষক একটি নতুন বিষয় চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন, যার উদ্দেশ্য শিশুদের মধ্যে সহনশীলতা, বৈচিত্র্য ও সামাজিক সংহতি গড়ে তোলা। তবে সমালোচকরা বলছেন, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা ও একীভবনের মতো মৌলিক সমস্যা সমাধান ছাড়া এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে না।

আবির

×