
ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বক্তব্য দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এক ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেছেন, তেহরান এই সংঘাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘জয়ী’ হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুখে তারা ‘চপেটাঘাত’ করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রচারিত এ বক্তব্যে খামেনি বলেন, ইরান কেবল যুদ্ধ জেতেনি, বরং আমেরিকাকেও ব্যর্থ করেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটিতে চালানো ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথাও উল্লেখ করেন, যেটি সোমবার কাতারে সংঘটিত হয়। যদিও ওই হামলায় সব রকেট প্রতিহত করা হয় এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
খামেনির ভাষায়, “আমেরিকা এই যুদ্ধে কোনো ফল অর্জন করতে পারেনি। ইসলামি প্রজাতন্ত্র জয় পেয়েছে এবং প্রতিশোধ হিসেবে আমেরিকার মুখে একটি চপেটাঘাত দিয়েছে।”
এটি ছিল যুদ্ধবিরতির পর তার প্রথম সরাসরি প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, “ওয়াশিংটন এই যুদ্ধে শুধু এজন্যই হস্তক্ষেপ করেছে, কারণ তারা মনে করেছিল, যদি কিছু না করে, তাহলে ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।”
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক স্থাপনা ও পরমাণু কেন্দ্রে একাধিক হামলা চালালে এই দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর খবরে জানা যায়, খামেনি নিরাপত্তার কারণে একটি গোপন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন এবং আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
এরপর গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার-বাস্টার বোমা দিয়ে বিশাল আক্রমণ চালায়। ওই ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেন এবং মঙ্গলবার তা কার্যকর হয়।
সংঘাতের চূড়ান্ত পর্যায়ে খামেনি এক ভিডিও বার্তায় জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই সময় ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, বৃহস্পতিবার তিনি আবার একটি ভিডিও বার্তায় হাজির হবেন—এটি সেই প্রতিশ্রুত বক্তব্য।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য আমি পুরো জাতিকে অভিনন্দন জানাই।”
অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতির একদিন পর ইরানের পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের পক্ষে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, এই প্রস্তাব অনুযায়ী ভবিষ্যতে আইএইএ কোনো পরিদর্শন চালাতে চাইলে তা ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করবে।
পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ বলেন, “আইএইএ এমনকি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনাটিকেও ন্যূনতমভাবে নিন্দা জানায়নি। তাদের এই অবস্থান সংস্থাটির আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।” তিনি আরও জানান, যতক্ষণ না পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, ততদিন আইএইএ-এর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত থাকবে।
বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাইও এই ইস্যুতে এক মন্তব্যে বলেন, “শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের অধিকার ইরানের রয়েছে, যা পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই অধিকার আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে ধরে রাখব।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “আমেরিকা যে আগ্রাসন চালিয়েছে, তা তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে চালানো বাংকার-বোমা হামলা কেবল কূটনীতি নয়, শান্তির পথও ধ্বংস করেছে।”
এই বক্তব্য এবং সংসদীয় সিদ্ধান্ত একসঙ্গে ইঙ্গিত দেয় যে, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও তেহরান তার কূটনৈতিক অবস্থান এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আরও আক্রমণাত্মক কৌশল নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র:ইউরো নিউজ
আফরোজা