
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক শহরে শুক্রবার ভোরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলো। যদিও ইরান দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে—তাদের পারমাণবিক প্রকল্প শুধুমাত্র বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ইসরাইলের এই হামলায় মূলত যেসব পারমাণবিক স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি একটি উচ্চ-সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ স্থাপনা। এখানে প্রায় ৭০টি সেন্ট্রিফিউজের লাইন রয়েছে, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই কেন্দ্রেই হামলা চালিয়ে পারমাণবিক বিজ্ঞানীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরেকটি আলোচিত কেন্দ্র হলো ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি তেহরান থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি পাহাড়ের নিচে নির্মিত সুরক্ষিত স্থাপনা। যদিও এখন পর্যন্ত ফর্দোতে সরাসরি হামলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমাদের নজরে।
এছাড়া ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র ও খোদাব হেভি ওয়াটার রিএক্টর কেন্দ্রও রয়েছে আলোচনায়। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA) ইসফাহানে ইউরেনিয়াম উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। খোদাবের কেন্দ্রটি ইরানের মারকাজী প্রদেশে অবস্থিত এবং অতীতে এটি অস্ত্র-উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে সন্দেহ করা হয়।
সবচেয়ে পুরাতন ও একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত বুশেহর শহরে। এটি রাশিয়ার সহায়তায় ২০১১ সালে আংশিকভাবে চালু হয় এবং ২০১২ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়।
সবশেষে আলোচনায় রয়েছে পারচিন সামরিক কমপ্লেক্স, যেটিকে IAEA অতীতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাব্য স্থাপনা হিসেবে সন্দেহ করেছিল। যদিও ইরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
১৩ জুনের এই হামলার পর আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশ্ন উঠেছে—ইরানের পারমাণবিক ভবিষ্যৎ কোন পথে যাচ্ছে? এই সংঘাত কি কেবল শুরু, নাকি সামনে আরও বড় উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে? মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ এখন সেই উত্তরের অপেক্ষায়।
আঁখি