নাইজেরিয়ার নাইজার রাজ্যের মোকওয়া শহরে গত বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এখনো অন্তত ৫০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
স্থানীয় কর্মকর্তা মুসা কিমবোকু জানান, নিখোঁজদের আর জীবিত পাওয়ার আশা না থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “এখন আর কাউকে জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বিবেচিত এই বন্যা মোকওয়ার টিফিন মাজা এবং আনগুয়ান হাউসাওয়া এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। টানা প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট এই বন্যায় বহু ঘরবাড়ি, সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মোকওয়ার জেলা প্রধান মুহাম্মদু আলিউ জানান, রোগপ্রবণতা ঠেকাতে শিগগিরই মাটির নিচে চাপা পড়া মৃতদেহ উদ্ধার কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন্যার পানি এত দ্রুত ও তীব্র ছিল যে অনেকেই নিজ চোখে প্রিয়জনদের ভেসে যেতে দেখেছেন।
একজন বাসিন্দা আদামু ইউসুফ বলেন, "আমি চোখের সামনে আমার স্ত্রী আর নবজাতক সন্তানকে পানিতে ভেসে যেতে দেখেছি। আমি বেঁচে গেছি কারণ আমি সাঁতার জানতাম।"
আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সালিউ সুলাইমান জানান, "আমি আমার বাসা হারিয়েছি, আর কৃষিপণ্যের বিক্রির ১,৫০০ ডলারের মতো আয় এক রাতেই পানিতে ভেসে গেছে। আমি ভেতরে গিয়ে টাকা বের করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পানির স্রোতের ভয় আমাকে তা করতে দেয়নি।"
অনেক স্থানীয় বাসিন্দা দাবি করেছেন, কাছাকাছি একটি বাঁধ ভেঙে পড়ার কারণে বন্যার মাত্রা এতটা ভয়াবহ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সরকারি নিশ্চয়তা মেলেনি।
রবিবার দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (NEMA) ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানায়। সংস্থাটি জানায়, বন্যায় সড়ক ও সেতুরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার প্রভাব স্থানীয় অর্থনীতি ও যান চলাচলে পড়ছে।
শুক্রবার নাইজেরিয়ান রেড ক্রস এক বিবৃতিতে জানায়, বন্যাটি "ব্যাপক প্রাণহানি ও দুর্দশা সৃষ্টি করেছে।"
নাইজেরিয়ায় এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে বন্যা নতুন কিছু নয়। ২০২৪ সালেও ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় অনেক মৃত্যু ও গৃহহীনতার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে দেশটিতে ভয়াবহ বন্যায় ৬০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং ১৩ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়।
Jahan
