ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইরানকে নতুন পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ২১:২৬, ১ জুন ২০২৫

ইরানকে নতুন পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে বলে হোয়াইট হাউস শনিবার নিশ্চিত করেছে। ওমানের মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাঈদির তেহরানে সংক্ষিপ্ত সফরের সময় তিনি মার্কিন প্রস্তাবের মূল উপাদানগুলো হস্তান্তর করেন। এই ঘটনাটি এমন সময় ঘটল যখন জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা (IAEA) জানায়, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন আরও বাড়িয়েছে—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অন্যতম উপাদান।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ইরানের উচিত এই প্রস্তাব গ্রহণ করা, কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, ইরানকে কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। তিনি আরও জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে “বিস্তারিত ও গ্রহণযোগ্য” একটি চুক্তি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

জবাবে, আরাকচি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “এই প্রস্তাবের জবাব দেওয়া হবে ইরানের জাতীয় স্বার্থ, অধিকার ও নীতির আলোকে।” তবে তিনি চুক্তির বিস্তারিত উল্লেখ করেননি।

IAEA-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করা ৪০০ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম সংরক্ষণ করছে, যা ৯০ শতাংশ মাত্রার অস্ত্র-মান ইউরেনিয়ামের একেবারে কাছাকাছি। এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম আরও সমৃদ্ধ করলে প্রায় ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব—এতে ইরান বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রহীন রাষ্ট্র হিসেবে এত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে।

এই প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানিকে IAEA-এর বোর্ড অফ গভর্নর্সের কাছে ইরানকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির লঙ্ঘনকারী হিসেবে অভিযুক্ত করার পথ তৈরি করে দিতে পারে।

তবে ইরান দাবি করেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং IAEA-এর প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।

এপ্রিল থেকে চলমান তেহরান-ওয়াশিংটনের আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেওয়া হলেও উভয় পক্ষে এখনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে মতভেদে রয়েছে। বিশেষ করে, চুক্তির আওতায় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখতে পারবে কিনা, তা নিয়ে বিরোধ আছে।

IAEA জানায়, ইরান গত তিন মাসে প্রতি মাসে একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে এবং তাদের এই কার্যক্রমে কোনো ধীরগতি দেখা যাচ্ছে না। মার্কিন কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ইরান চাইলে দুই সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্র-মান ইউরেনিয়াম তৈরি করতে পারে এবং কয়েক মাসের মধ্যে একটি পরমাণু বোমা তৈরি করা সম্ভব হতে পারে।

ইরান দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না। তবে IAEA জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না, কারণ ইরান উচ্চপর্যায়ের পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না এবং তাদের পারমাণবিক ইতিহাস সংক্রান্ত বহু প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না।

ট্রাম্প এর আগে ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে করা বহুপক্ষীয় পরমাণু চুক্তি (JCPOA) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। ২০১৫ সালে এই চুক্তিটি ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

JCPOA-এর অধীনে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমিত ও পর্যবেক্ষণাধীন করা হয়, যার বিনিময়ে তাদের ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তিকে “অসম্পূর্ণ ও সাময়িক” বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এতে অন্তর্ভুক্ত না থাকার সমালোচনা করে।

চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করে এবং “সর্বোচ্চ চাপ” কৌশলের মাধ্যমে ইরানকে নতুন শর্তে চুক্তিতে আসার জন্য বাধ্য করতে চায়। এর জবাবে ইরানও ক্রমশ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করতে থাকে।

এর আগেও ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে সামরিক হামলা চালানো হতে পারে।

Jahan

×