
ছবিঃ সংগৃহীত
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত—এমন অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। হামলার পর ভারত একের পর এক কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা পদক্ষেপ নিলেও, ইসলামাবাদ পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে এবং যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা জোরদার হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার পেহেলগাম হামলা নিয়ে নতুন এক তথ্য প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের জিও টিভি সহ একাধিক গণমাধ্যম। তারা দাবি করেছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর (RAW) প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে এই হামলায়। এমনকি একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’-এর মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয় বলে দাবি করা হয়েছে।
গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, টেলিগ্রামে ফাঁস হওয়া কিছু গোপন নথিতে হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা, নির্দেশনা এবং সময়সীমার উল্লেখ রয়েছে। ওই নথিগুলোতে দেখা যায়, হামলার পর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর ওপর দোষ চাপানোর ছক কষা হয়। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো নির্ধারিত সময়সীমার আগেই পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন প্রচার করে।
পাকিস্তানের দাবিমতে, অন্তত ২০০টিরও বেশি ভুয়া সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। ফাঁস হওয়া তথ্যে আরও উল্লেখ রয়েছে, র-এর এজেন্টরা পর্যটকের ছদ্মবেশে হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, যেন ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ তৈরি করা যায়। একইসঙ্গে কিছু অস্পষ্ট ভিডিও ব্যবহার করে আইএসআই-এর সম্পৃক্ততা প্রমাণে ফরেনসিক বিশ্লেষণের ছকও ছিল ওই পরিকল্পনায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব নথি যদি সত্যি হয়, তাহলে তা ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একইসঙ্গে কাশ্মীর পরিস্থিতিও আরও জটিল হয়ে উঠবে। এদিকে, এপ্রিল মাসজুড়ে ভারতীয় বাহিনী অধিকৃত কাশ্মীরে নয়জনকে হত্যা এবং প্রায় ২৪৮০ জন কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি পাকিস্তানের।
এর মাঝেই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পেহেলগাম হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে করা একটি মামলা খারিজ করে দেয়। আদালতের মন্তব্য, এমন মামলা সেনাবাহিনীর মনোবলে আঘাত হানতে পারে।
দুই দেশের মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তে টানা সাতদিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে আকাশসীমা ব্যবহারে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, যেকোনো আগ্রাসন মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইএসআই-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আসিম মালিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ চৌধুরী এবং দেশটির একাধিক রাজনৈতিক দল। পিটিআই বলছে, জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন, তাই ইমরান খানের মুক্তির দাবিও সামনে এসেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দু'দেশকেই সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তবে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ১৩ কোটি ডলারের সামুদ্রিক প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দিলেও, অপরদিকে চীন ঘোষণা করেছে—সব পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে থাকবে।
মারিয়া