
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে পালিত হলো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম ফরিদপুর সফরের শতবর্ষ উদ্যাপন।
বৃহস্পতিবার (১ মে ২০২৫) সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবের সভাপতি এম এ সামাদ, সাহিত্য পরিষদের সভাপতি প্রফেসর আলতাফ হোসেন, ফরিদপুরে নজরুল বইয়ের সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন, চলচ্চিত্র পরিচালক তাপস কুমার দত্ত, যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল মৃধা সহ আরো অনেকে।
স্বাগত বক্তব্যে মফিজ ইমাম মিলন বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম ফরিদপুরে প্রথম এসেছিলেন ঠিক একশ বছর আগে, আজকের দিনে। অর্থাৎ ১৯২৫ সালের ১ মে তারিখে। বঙ্গীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগ দিতে। সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, সরোজিনী নাইডু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ বহু নেতা। দুই অধিবেশনেই সভাপতিত্ব করেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। তবে তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন ২ রা মে ২০২৫। অনেক স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি জসীম উদদীন।
অধিবেশনে বিখ্যাত ব্যক্তিদের তালিকায় ফরিদপুরের বিপ্লবী নেতা পূর্ণচন্দ্র দাস এবং দক্ষিণ পন্থি নেতা যদুনাথ পাল উপস্থিত ছিলেন। পূর্ণচন্দ্র দাস ১৯১০ সালে মাদারীপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী কাজে জড়িয়ে পড়েন। মাদারীপুরে একটা বিপ্লবী দল (শান্তি সেনাদল ) গঠন এবং একসময়ে বাঘা যতীনের সহযোগী হন। যদুনাথ পালের কোনো তথ্য কমরেড মুজাফফর আহমদ ও আবদুল আজিজ আল আমানের বইতেও পায়নি।
নজরুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে ফরিদপুরে সভা-সমিতি, সংবর্ধনা, রাজনৈতিক সভা ও নিজ নির্বাচনী কাজে মোট আটবার ফরিদপুর এসেছেন। তাঁর স্মৃতি জড়িত রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ, টাউন হল যা পরবর্তীতে অম্বিকা হল / ময়দান, মৃণাল সেনের বাড়ি, হুমায়ুন কবিরের বাড়ি, কবি জসীম উদদীন এর বাড়ি, মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী লাল মিয়া সাহেবদের ময়েজ মঞ্জিলের পুকুর ঘাটলা (বকুল তলা) সহ অনেক জায়গা থাকলেও নজরুলের নামে কোনো স্মৃতি ফলক বা একটা সাইনবোর্ডও নেই ফরিদপুরে!
চলচ্চিত্র পরিচালক তাপস কুমার দত্ত বলেন, নজরুল এমন একটি হীরা যা বাঙালির জন্য অমূল্য। নজরুল কে ধারণ করলে আমরা মহিমান্বিত হই। আমাদের বেশি বেশি নজরুল চর্চা করা উচিত। কবি রাজ্জাক রাজা বলেন, বাংলাদেশে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদাটি বিশাল। তাঁকে দেয়া হয়েছে জাতীয় কবির মর্যাদা। এটি এক বিরল সম্মান। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।
প্রফেসর আলতাফ হোসেন বলেন, আজ থেকে ১০০ বছর আগে কবি নজরুল ফরিদপুরে ১ মে এসেছিলেন। এটি একটি বিচিত্র ঘটনা। রাজেন্দ্র কলেজে যখন কবি নজরুলের নামে হল ঘোষণা করা হয় তখন আমি কলেজের একজন শিক্ষক। সেই সময়ই কেন যেন মনে হয়েছিল এই হলটি একদিন থাকবে না। কেন যেন অবাস্তব লাগছিল। আজ তাই বাস্তব হলো। তবে এই কথাটা ঠিক হল শিল্প কলার থাক বা কলেজের নামটা যেন কবির নামে থাকে। আমাদের আরো বড় দুর্ভাগ্য যে কবি নজরুল ৮ বার এসেছেন কিন্তু তার নামে কোন স্মৃতিফলক নাই। এমনকি একটি রাস্তার নামকরণও করা হয়নি।
সবশেষে তিনি বলেন, নজরুলকে নিয়ে আমরা দ্বিধাবিভক্ত না হই। কবিকে যেন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে পারি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়াল, কবি সৈয়দ মজনু, চিত্রশিল্পী সজল বাড়ৈ, শুশিল কুমার সরকার, আমরা করবো জয়ের সাধারণ সম্পাদক শরীফ খান, কণ্ঠশিল্পী সোহান শরিফ সহ আরো অনেকে।
আবিদুর রহমান নিপু/মিরাজ খান