ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই ॥ পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতের হামলার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ২০ ডিসেম্বর ২০২০

ভারতের হামলার প্রস্তুতি

পাকিস্তানের মাটিতে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি এ দাবি করেন। পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় পরমাণু সমৃদ্ধ চির বৈরী দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে চলমান সংঘাত নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা চান। শাহ মেহমুদ কোরেশি বলেন, এই ধরনের হামলা হলে পাকিস্তানও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। খবর আলজাজিরা অনলাইনের। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, আমরা গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরেছি, ভারত পাকিস্তানে ফের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ কাজে তারা চৌকস কর্মকর্তাদের প্রস্তুত করছে। পাশাপাশি তাদের মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে এ হামলার জন্য সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর তিন দফা যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। নানা কারণে দুপক্ষের মধ্যে অব্যাহতভাবে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দুদেশের সামরিক বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ওই সময় ভারত পাকিস্তানে বোমা নিক্ষেপ করে। জবাবে ভারতের একটি জঙ্গীবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান। বিমানটির পাইলটকে আটক করা হয়। পরে উত্তেজনা কমানোর জন্য ভূপাতিত করা বিমানের পাইলটকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানে যদি হামলা চালানো হয় ভারতেও হামলা হবে। আমি পরিষ্কারভাবে ভারতকে বলে দিতে চাই পাল্টা আঘাত এবং তাদের পরাস্ত করতে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা যেভাবে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছি, ভারত যদি আবারও পুরনো পথে হাঁটে, তাহলে আমরা আগের মতো ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবো। এ বিষয়ে ভারতের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুঈদ ইউসুফ বলেন, সুনির্দিষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্রে ভারতের হামলা পরিকল্পনার তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, বিশ্বে শান্তি রক্ষা করা সবার সমন্বিত দায়িত্ব। অভ্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে চোখ সরানোর জন্য ভারত হামলার পরিকল্পনা করছে। বিশ্ববাসীর উচিত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে ভারতকে বিরত রাখা। উভয় প্রতিবেশী একে অপরের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা এবং হামলা পরিকল্পনার অভিযোগ করে আসছে। ২০১৬ সালে ভারত দাবি করে, তারা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরিতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ওই সামরিক অভিযান চালানো হয় বলে নয়াদিল্লী দাবি করে। ওই সময় পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে ভারতীয় সামরিক অভিযানের দাবিকে উড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি গত শুক্রবারও পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের হামলার দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাক সামরিক সূত্র জানায়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গুলি চালিয়ে জাতিসংঘের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ভারত। এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনী জানায়, বিনা উস্কানিতে ভারতের সেনাবাহিনী লাইন অব কন্ট্রোলের চিরিকোট সেক্টরে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় বাহিনী সুনির্দিষ্টভাবে জাতিসংঘের গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় সামরিক বাহিনীর দুজন পর্যবেক্ষক গাড়িতে ছিলেন। পাক সূত্র ওই গাড়ির একটি ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিতে বুলেটের চিহ্ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি দেখা যায়। এ ঘটনায় জাতিসংঘ এখনও কোন বিবৃতি দেয়নি। তবে এ সংক্রান্ত খবর উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। শুক্রবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হয়, ওই এলাকায় ভারতের পক্ষ থেকে কোন গুলি চালানো হয়নি। এ অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শনিবার বলেন, ‘জাতিসংঘের গাড়িতে হামলা নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তথ্যগতভাবেই ভুল। শুক্রবার ওই সেক্টরে ভারতের পক্ষ থেকে কোন গুলি চালানো হয়নি। জাতিসংঘের গাড়ি চলাচলের তথ্য আগে থেকেই জানা থাকায় এই ধরনের গুলি চালানোর কোন প্রশ্নই ওঠে না। এ অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।’
×