ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইস্পাতের ওপর ৫০ শতাংশ, এ্যালুমিনিয়ামে ২০ শতাংশ ॥ লিরার দরপতন

এবার তুর্কী পণ্যে মার্কিন শুল্ক

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১২ আগস্ট ২০১৮

এবার তুর্কী পণ্যে মার্কিন শুল্ক

যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা বেড়েছে। শুক্রবার থেকেই তুরস্কের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এই প্রথম ন্যাটোর একটি মিত্রদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যথেষ্ট অবনতি ঘটার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই অস্থিতিশীলতা আরও প্রকট আকার নিতে পারে। -নিউইয়র্ক টাইমস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার তুরস্কের সমালোচনা করে একটি টুইট করেন। তিনি এতে তার দেশের যাজক এ্যান্ড্রু বেনসনকে ২১ মাস ধরে কারাগারে আটক রাখার সমালোচনা করেন। তুরস্কে দুবছর আগে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর অন্য অনেকের সঙ্গে ব্রেনসন আটক হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা এবং গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাদ- হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এসব অভিযোগের কোন প্রমাণ নেই বলেও মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসের ১ তারিখ তুরস্কের স্বরাষ্ট্র ও বিচারমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। দুজনই এরদোগানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এরপর এখন তুরস্ক থেকে ইস্পাত আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ এবং এলুমিনিয়ামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রে বাইরে থেকে আমদানি করা ইস্পাতের ১৩ শতাংশ যায় তুরস্ক থেকে। ট্রাম্প টুইটারে একথা স্বীকার করেন যে, ‘তুরস্কের সঙ্গে এখন আমাদের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না।’ নর্থ ক্যারোলিনা থেকে যাওয়া ওই যাজক ২৩ বছর ধরে তুরস্কে বাস করছেন এবং ইজমির রিসারেকশন চার্চ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর বহু লোককে আটক করা হয়। আটককৃতদের অনেকে এখন বিচারের সম্মুখীন। ধরপাকড়কালে ২০ জন মার্কিন নাগরিকও আটক হন। যদের মধ্যে একজন নাসার বিজ্ঞানী এবং পেনসিলভানিয়ার একজন কেমিস্ট্রির অধ্যাপকও ছিলেন। এরদোগান তখন অভিযোগ করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। ন্যাটোর মিত্র এ দুই দেশের মধ্যে এ বিরোধকে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে ১৯৭৪ সালে তুরস্কের সাইপ্রাসে হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তুরস্কে অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিলে আঞ্চলকি পর্যায়ে তার প্রভাব পড়তে পারে। ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার সঙ্গে দেশটির অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে। তুরস্ক বিশ্বের ১৭তম অর্থনীতির দেশ। দেশটিতে যেকোন ধরণের অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব মিত্র দেশগুলোর পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপরও পড়তে পারে। দেশটিতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত বলে জানা গেছে। এক মাস আগেও মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার দর ছিল ৪.৭, শুক্রবার লিরার দর কমে গিয়ে সেটি হয়েছে ৬.৪। গত এক মাসে লিরার ৩০ শতাংশ দরপতন হয়েছে। চলমান সঙ্কটে এরদোগান এখনও সুর নরম করার কোন লক্ষণ দেখাননি। শুক্রবার দুটি জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, ‘তুরস্ক কখনও বিদেশী শক্তির কাছে মাথা নত করবে না। তারা আমাদের দেশে সঙ্কট তৈরির চেষ্টা করছে।’ তিনি এটাও দাবি করেন যে, যারা মনে করে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে তুরস্ককে দমন করা যাবে, তুরস্ক সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা নেই।’ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি আরও বলেন, তুরস্কের একটি প্রতিনিধিদল এখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে। তারা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলবে। তিনি এ সফর থেকে একটি ভাল ফল আশা করছেন। শুক্রবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এরদোগান তুর্কি নাগরিকদের লিরার সঙ্গে বিদেশী মুদ্রা ও স্বর্ণ বিনিময়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন। মুদ্রার দরপতনকে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এটি জাতীয় লড়াই। অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের সুরক্ষায় কিছু দেশ এমন আচরণে লিপ্ত হয়েছে, তারা আইন কিংবা বিচার মানে না। ওই দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এমন এক বিন্দুতে পৌঁছে যাচ্ছে যেখান থেকে তা আর উদ্ধার করা সহজ হবে না। তার ওই ভাষণের পরপরই টুইটারে তুর্কি ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরপরই মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা শুরু হয়, ইউরোর দর ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়ে পড়ে, ডলারের দাম বাড়ে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপকে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম বিরোধী’ অভিহিত করে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আঙ্কারা।
×