ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর কোরিয়া সঙ্কট কোন ভাল বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২ আগস্ট ২০১৭

উত্তর কোরিয়া সঙ্কট কোন ভাল বিকল্প নেই

গত ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে উত্তর কোরিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে যা তত্ত্বগতভাবে আলাস্কায় পৌঁছাতে পারে। উত্তর কোরিয়ার মতো একটি দেশের জন্য এ এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। বলাবাহুল্য দেশটি নিয়মিতই আমেরিকাকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হুমকি দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গত কারণেই উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত। কয়েক দশক ধরে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচী উভয় দলের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ ঘটিয়েছে। দেশটির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা উঠলেই চীন ও রাশিয়ার দিক থেকে আলোচনায় বসার জন্য চাপ আসে। ওদিকে উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু চীন পিয়ংইয়ংকে চাপে ফেলতে অনীহার পরিচয় দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সঙ্কেত দিয়েছেন তিনি কোন না কোন এ্যাকশন চান। এর প্রেক্ষাপটে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গত এপ্রিলে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যবর্তী অসামরিকৃত এলাকা পরিদর্শন করে ঘোষণা করেন যে স্ট্র্যাটেজিক সংযমের যুগ শেষ হয়ে গেছে। এমন কঠিন কথা উচ্চারণের পর যে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার কথা তা কিন্তু নেয়া হচ্ছে না। সেখানে একটা দোনোমনো ভাব দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা কি শেষ পর্যন্ত সামরিক পথ বেছে নেবে? আমেরিকা উত্তর কোরিয়ায় বোমা মেরে তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে এমনটা খুব কম মানুষই মনে করে। তার একটা কারণ হলো উত্তর কোরিয়া নিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অতি দক্ষতার সঙ্গে লুকিয়ে রাখতে পারে। হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র যে এদের সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্রই ধ্বংস করতে পারবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। উপরন্তু উত্তর কোরিয়ার প্রতিহিংসামূলক হামলাও হবে ভয়ঙ্কর। মনে রাখা দরকার যে তাদের প্রচলিত অস্ত্রের পাল্লার মধ্যে আড়াই কোটি দক্ষিণ কোরিয়া বাস করে। অন্যদিকে জাপানও এদের হামালার টার্গেট হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার একটি স্থাপনার ওপর একটা অসম্পূর্ণ মার্কিন সামরিক হামলায় ১০ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটতে পারে। আর্থিক ব্যয় হতে পারে ১ ট্রিলিয়ন ডলার। এটা ক্লিনটন যুগে দেয়া পেন্টাগণের হিসাব। এতগুলো বছর পর সেই অঙ্ক বাড়বে বৈ কমবে না। সবচেয়ে আশু ঝুঁকিতে পড়বে আলাস্কায় বসবাসরত আমেরিকানরা। সেই রাজ্যের লোক সংখ্যা সাড়ে ৭ লাখ। যুক্তরাষ্ট্রের শুত্রু ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থাই এদের একমাত্র ভরসা। মার্কিন হামলাকে হিসাবের মধ্যে রাখলে উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ বাড়বে ঠিকই। তবে কিম জং উন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানতে পারার মতো উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে শুধু এই যুক্তিতে তার দেশের ওপর হামলা চালানোর ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হবে কি না সে ব্যাপাারে সন্দেহ আছে। ১৯৯০-এর দশকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। এমন এক ঝানু সাবেক কূটনীতিক উইন্ডি শেরম্যানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যুদ্ধই কি বাঞ্ছনীয় সমাধান? তিনি বলেছিলেন, অবশ্যই না। কারণ সেটা হবে বিপর্যয়কর। তাহলে কি করণীয়? বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক মনে করেন অর্থনৈতিক চাপই সবচেয়ে উপযুক্ত কৌশল এবং এক্ষেত্রে চীন ভূমিকা রাখতে পারে। উত্তর কোরিয়ার ওপর সর্বাধিক চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা চীনের আছে কারণ দেশটির বেশিরভাগ খাদ্য ও জ্বালানি আসে চীন থেকে। কিন্তু তার পরও সমস্যা আছে। কিমের সঙ্গে সুস্পষ্ট টানাপোড়েন থাকা সত্ত্বেও চীন বৈষয়িকভাবে দেশটির ক্ষতি করতে চায় না। চীন মনে করে আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক অবরোধ দেয়া হলে উত্তর কোরিয়ার পতন ঘটবে। তখন সেদেশ থেকে চীনমুখী উদ্বাস্তুর ঢল নামবে। এ অবস্থায় দুই কোরিয়া এক হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র এসে সেখানে গেড়ে বসবে। অর্থাৎ আমেরিকার উপস্থিতি সরাসরি চীন সীমান্তে চলে আসবে। চীন এ অবস্থা কিছুতেই চায় না। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট উদারপন্থী মুন জাই-ইন অর্থনৈতিক উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রদানের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। অতীতে বহুপন্থীয় আলোচনা উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে এনেছিল যার পরিণতিতে ১৯৯৪ সালে এক সফল চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং দেশটির পরমাণু কর্মসূচী প্রায় এক দশক বিলম্বিত হয়। বর্তমান সঙ্কটে সেই ধরনের আলোচনাই এখন প্রয়োজন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। সূত্র : টাইম
×