ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমা স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা

উপসাগরীয় অঞ্চলে ঐক্যের আহ্বান ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৮ জুন ২০১৭

উপসাগরীয় অঞ্চলে ঐক্যের আহ্বান ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি কাতারের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদে সৌদি আরব ও তার আঞ্চলিক মিত্রদের সমর্থন দিয়ে গেছেন। খুবই আকস্মিক ও সমন্বিতভাবে সৌদি, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সোমবার কাতারের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। পাশাপাশি মাত্র ২৭ লাখ অধিবাসীর দেশটির সঙ্গে স্থল, নৌ ও আকাশপথে সংযোগও বন্ধ করে দিয়েছে উপসাগরীয় প্রতিবেশীরা। খবর এএফপির। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব বিশ্বের এটাই সবচেয়ে বড় সঙ্কট হিসেবে দেখা দিয়েছে। কাতারের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদের অভিযোগ, দেশটি উগ্রপন্থীদের মদদ ও মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের এজেন্ডাকে সমর্থন দিচ্ছে। ক্ষুদে ব্লগ টুইটারে কয়েতদফা পোস্ট দিয়ে ট্রাম্প জানিয়ে দেন, দোহাকে একঘরে করার চেষ্টায় তারও সমর্থন আছে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক বিমানঘাঁটি কাতারে। গত মাসের রিয়াদ সফরের উদ্ধৃতি টেনে টুইটারে ট্রাম্প বলেন, সৌদি সফরে দেশটির রাজা ও আরও অর্ধশত দেশের সঙ্গে যে কথা হয়েছে, তা ইতোমধ্যে সফল হয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কট্টরপন্থীদের অর্থায়নের বিরুদ্ধে তারা কঠোর পদক্ষেপ নেবেন। এ ব্যাপারে সবার অভিযোগের তীর ছিল কাতারের দিকে। কাজেই সন্ত্রাসবাদের বিভৎষতা বিদায় জানানোর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। যখন ট্রাম্প তার প্রিয় মাধ্যম টুইটারে কাতারের বিরুদ্ধে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন, তখন আরব দেশগুলোর বিভেদের নিষ্পত্তি ঘটাতে কুয়েতের শাসক সৌদি আরবের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছেন। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানির উদ্ধতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন একটি প্রতিবেদন করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে থানি বলেন, এফবিআই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, এ সঙ্কটে রুশ হ্যাকারদের হাত রয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দার মনে করেন, হ্যাকাররা কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে একটি ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিয়েছে। এতে সৌদি নেতৃত্বে দেশটির বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এদিকে বিবিসির সঙ্গে আলাপে থানি ট্রাম্পের টুইটের জবাব দেন। সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়নের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কাতার সরকার ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের তহবিল সরবরাহ করছে বলে কোন প্রমাণ নেই। জ্বালানি সমৃদ্ধ কাতারের সঙ্গে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলছে। কিন্তু সৌদি ও তার সহযোগীদের এ উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যে আরও অস্থিরতা ও সঙ্কট বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করে দিয়েছে। মঙ্গলবার দিনের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফোনে সৌদি রাজা সালমানের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। ট্রাম্প টুইটারে যা বলেছেন, সৌদি রাজার সঙ্গে ফোনে তা থেকে একেবারে ভিন্ন সুরে কথা বলেন। ফোনালাপ নিয়ে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, সন্ত্রাসবাদ পরাস্ত করতে ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদকে (জিসিসি) গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জোর দিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে যে কোন দেশ কর্তৃক সন্ত্রাসবাদের প্রবর্তন ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে অর্থায়ন সংগ্রহ ঠেকানোর লক্ষ্য নির্ধারণে দুই নেতা কথা বলেছেন। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান মিলে গঠিত উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান কাতারকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এরদোগান কাতারের ঠা-া মাথায় ও গঠনমূলক ভূমিকার তারিফ করে বলেন, দেশটিকে একঘরে করে রাখা কোন সমাধান হতে পারে না। সৌদি নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে দোহায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। দেশটির কয়েক ডজন ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আঞ্চলিক আকাশপথে কাতারি বিমান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সঙ্কটের আশঙ্কায় খাদ্য কিনে মজুদ রাখতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছে। সংলাপে প্রস্তুত কাতার সঙ্কটের কারণ বিবেচনায় নিয়ে দোহার সঙ্গে অন্য আরব দেশ জর্ডানও কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্ব শিথিল ও আল জাজিরা টেলিভিশনের আম্মান ব্যুরোর লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকান দেশ মৌরতানিয়া রিয়াদকে সমর্থন জানিয়ে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তবে কাতার জানিয়েছে, তারা সংলাপে প্রস্তুত। বিপরীতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের বলেন, দোহাকে অবশ্যই তার নীতি বদলাতে হবে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন বন্ধ করতে হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, শান্তির পথ এগিয়ে নিতে তিনি সব ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত রয়েছেন। কাতারের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় তৈরি হওয়া সঙ্কট মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। কেবল কাতার ও তার নাগরিকরাই সেই পরিণতির মুখোমুখি হবে না, মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা স্বার্থও বিঘিœত হবে। আল উদায়েদ সামরিক ঘাঁটিতে প্রায় ১০ হাজার সামরিক কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া ইসলামিক এস্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অভিযান গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচনা করছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
×