ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর উপত্যকায় ২৬ বছর পর পুনর্মিলন

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২২ এপ্রিল ২০১৭

কাশ্মীর উপত্যকায় ২৬ বছর পর পুনর্মিলন

সেই ২৬ বছর পর পুনর্মিলন। মুহাম্মদ আশরাফের চোখ পানিতে ভরে যায়। যুগপৎ আনন্দ ও বেদনার এক অভূতপূর্ব অনুভূতি। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পরিবারের সঙ্গে তার এই বিচ্ছেদ। ‘আমরা যখন আলাদা হয়ে যাই, আমার ছেলের বয়স তখন ১২ বছর এখন আমার নাতির বয়স ১৬। এএফপিকে তার দুঃখের কাহিনী শোনালেন আশরাফ। ১৯৯০ সালে আরশরাফ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করতেন। পাকিস্তানী ভূখ-ের কাছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একটি গ্রামে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। এ সময় নয়াদিল্লীর শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে সহিংসতা তুঙ্গে ওঠে। ওই বছর অক্টোবরের মধ্যে কাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড় ও নির্যাতনের মুখে আশরাফের পরিবার ভয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। অন্য ২০ হাজার ভারতীয় কাশ্মীরর সঙ্গে তারা নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তান চলে যায়। আশ্রয় নেয় শরণার্থী শিবিরে ভারতে থেকে যান আশরাফ। এক সপ্তাহ পর জানতে পারেন তার পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তান পৌঁছতে পেরেছে। আশরাফ এএফপিকে বলেন, আমার জীবনের সোনালি সময় চলে গেছে। যখন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারতাম কিন্তু তা হলো না। আশরাফের এই হৃদয় ছোঁয়া কাহিনীর মতোই কাশ্মীরের হাজার হাজার শরণার্থীর জীবন ১৯৪৮ সালের ভারত বিভক্তির সময় থেকেই দুই প্রান্তে এ রকম দুর্দশার কাহিনী চলে আসছে। কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সংঘাতময় এলাকাগুলোর একটি। পরমাণু শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই দাবি করে থাকে গোটা কাশ্মীর উপত্যাকাকে। ভারত বিভাগের সময় থেকে চলে আসছে এই ধারা। ভারত ও পাকিস্তান ইতোমধ্যে দুইবার যুদ্ধ করেছে কাশ্মীর নিয়ে। আশরাফের জীবন আটকা পড়েছে তার সৈনিক পেশার কাছে। তিনি বলেন, ভেবেছি চাকরি ছাড়লে আমাকে চিহ্নিত করা হবে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। এছাড়া ভারতীয় কাশ্মীরে তার এক মেয়ে রয়েছে। তার ওপরই নির্যাতন হওয়ার ভয় ছিল। ভারতীয় সৈনিকের চাকরিতে থাকাকালে তাকে পাকিস্তানী ভূখ- সফরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। ২০০৬ সালে তিনি অবসর নেন। এবার পাকিস্তানে তার পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য চেষ্টা বাড়িয়ে দেন। প্রথমে চেষ্টা করেন কাশ্মীর বাস সার্ভিস ব্যবহার করতে। কিন্তু পাঁচবার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। দুই কাশ্মীরের মধ্যে চালু হওয়া এই বাস সার্ভিসের টিকেট পাওয়া রীতিমতো ভাগ্যের বিষয়। এবার আশরাফ আবেদন করেন পাসপোর্টের জন্য। টার্গেট আরও দক্ষিণে পাঞ্জাব সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানী ভূখ-ে ঢুকবেন তিনি। কিন্তু বিধি বাম। তার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে লেগে যায় ১০ বছর। পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণ অজানা। তবে ধারণা করা হয় এক সাবেক ভারতীয় সৈনিক হিসেবে তার পাকিস্তান ভ্রমণে কর্তৃপক্ষ পছন্দ করেনি। শেষ পর্যন্ত পাসপোর্ট মিল ২০১৬ সালে। কিন্তু ততদিনে আশরাফের বাবা-মাকে দেখা হলো না। তাদের দুজন ইন্তেকাল করেছেন পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। কোন কিছু থেমে থাকেনি। তার ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়েছে তাদের সন্তান হয়েছে। এই ২৬ বছর তাকে শুধু চোখের পানি ফেলতে হয়েছে পরিবারের সদস্যদের কথা মনে করে। স্বামীকে ছেড়ে বদরুনসেনা যখন পাকিস্তান চলে যান তখন তার বয়স ছিল ৩৬ বছর। এখন তার বয়স ৬২। জীবনের এই দীর্ঘ সময় তিনি কাটিয়েছেন স্বামীকে ছাড়া। একা সন্তানদের মানুষ করতে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছে। এর মধ্যে সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের সন্তানও হয়েছে। আর তিনি শুধু ভারতে পড়ে থাকা স্বামীর কথা মনে করে নীরবে চোখের পানি ফেলেছেন। -এএফপি
×