ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শক্তি প্রয়োগে সব সমস্যার সমাধান চান ট্রাম্প

মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৩১ মার্চ ২০১৭

মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র গত বছর ইয়েমেনে যতবার বিমান হামলা চালিয়েছে, চলতি মাসে সে দেশে তার চেয়ে বেশি হামলা করেছে। সিরিয়ার চিত্রও ভিন্ন কিছু নয়। তারা সেখানের স্থানীয় বাহিনীকে বিমানে করে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে এবং বিমান হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে বলে রণাঙ্গণের খবরে বলা হচ্ছে। ইরাকের মসুলে গত ১৭ মার্চের স্থল অভিযানের সময় মার্কিন বিমান ও স্থল বাহিনী হামলা চালিয়ে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রণাঙ্গণে মার্কিনী তা-বকে রক্তের হোলি খেলা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ সেøাগান দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন, দু’মাসের মতো হলো তার অভিষেক হয়েছে, এর মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে তার আগ্রাসী ও জটিল সমরকৌশল আর বিস্তৃত হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। গত বুধবার মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল জোসেফ এল ভোটেল এক বিবৃতিতে বলেন, গৃহীত নতুন যুদ্ধ প্রক্রিয়ায় এখন থেকে রণাঙ্গণের অধিনায়কের বিমান হামলা পরিচালনার জন্য আর উর্ধতন কর্মকর্তার অনুমতির প্রয়োজন হবে না বরং নিজেরাই বিমান হামলার তাৎক্ষণিক আদেশ দিতে পারবেন। এর মর্মার্থ হচ্ছে যত মানুষ মরে মরুক তবু যুদ্ধে জিততে হবে, ট্রাম্পের ভাষায় ‘ফাইট টু উইন’। মাথা গরম অফিসারদের নির্বিচার বোমা হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের কোন উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নেই। প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাস দমনে সামরিক ব্যবস্থার পাশাপাশি নেপথ্যে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালানো হতো। কিন্তু ট্রাম্প শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন এবং কূটনতিক উদ্যোগ গ্রহণের পেছনে অর্থ ব্যয় হ্রাসের প্রস্তাব করেছেন। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও জটিল থেকে জটিলতর হবে, যার কোন সুস্পষ্ট সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইতেমাধ্য ইউরোপ-আমেরিকায় আশ্রয়গ্রহণকারী অভিবাসীদের মধ্যে এই মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে যে, পশ্চিমা দেশগুলো তাদের শান্তিময় জীবনে যুদ্ধ চাপিয়ে না দিলে তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে অন্যদেশে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হতো না, ভিক্ষুকের মতো অন্যের করুণা প্রার্থনা করতে হতো না। সিনিয়র ও জুনিয়র বুশ এবং ব্রিটেনের টনি ব্লেয়ার মিলে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে ইরাকের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করেন। এখন সেখানে কী হচ্ছে, শান্তির কোন সুবাতাস সেখানে বইছে কী? এমন কোন দিন সেখানে যায় না, সেদিন আত্মঘাতী জঙ্গী হামলা অথবা বিমান হামলায় মানুষের রক্তে সেখানের মাটি রঞ্জিত হয় না। সেজন্য সাদ্দামের পতনের পর একজন রাজনীতি বিশ্লেষক বলেছিলেন ‘আজ থেকে নরকের দ্বার খুলে গেল।’ রবার্ট ম্যালে নামে ওবামা প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, হয় যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, নতুবা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অর্জিত বিজয় হাত ছাড়া হয়ে যাবে। অন্য একটি ধারণাও এ বিষয়ে কাজ করছে যে, বড় ধরনের সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের মোর অন্ধকারে তলিয়ে যাবে, সেখান থেকে দেশটি বেড়িয়ে আসার পথ খুঁজে পাবে না। এর ফলে বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে এবং হতাশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র আমেরিকা বিরোধী মনোভাব সৃষ্টির পাশাপাশি জিহাদীদের প্রচার প্রপাগা-া বৃদ্ধি পাবে। মোদ্দাকথা যুক্তরাষ্ট্র একা অনেক ফ্রন্টে এককভাবে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ক্রমেই হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থায় পড়েছে। এরপর যদি আফগানিস্তানে রাশিয়া ১৯৮৮ সালে তার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে জোট বেঁধে তালেবানদের আস্থায় আনতে পারে, তবে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পালানো ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না। নিউইয়র্ক টাইমস।
×