ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দৃশ্যপট সিরিয়া যুদ্ধ

এক ধর্মান্তরিত মার্কিন কৌতুক অভিনেতার উপলব্ধি

প্রকাশিত: ০৩:২৪, ১৮ মার্চ ২০১৭

এক ধর্মান্তরিত মার্কিন কৌতুক অভিনেতার উপলব্ধি

সঙ্গীত আর অভিনয় নিয়ে নিউইয়র্ক চষে বেড়াতেন এক সময়ের কৌতুক অভিনেতা ডেরেল লেমপ্ট ফেলপ্স। এখন তাকে দেখা গেল সিরিয়ার যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক বেল্ট ও মুখোশ পরিহিত এক জঙ্গীর সাক্ষাতকার নিচ্ছেন। বর্তমানে এই ডেরেলের সঙ্গে পঁচিশ বছর আগের ডেরেলের পোশাক আশাক বা অবয়বে কোন মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন ডেরেলের নাম পরিবর্তিত হয়ে বিলাল আব্দুল করিমে রূপান্তরিত হয়েছে। আব্দুল করিম ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। টেকো মাথা, ভগ্নস্বাস্থ্য ও মুখে চাপদাড়ি বিশিষ্ট আব্দুল করিম তার পরিবর্তিত জীবনের কিছু ঘটনার উপর আলোকপাত করেছেন। আফ্রিকান-আমেরিকান ধর্মান্তরিত মুসলিম আব্দুল করিম ২০১২ সালে প্রথম যখন সিরিয়া যান, তখন ইসলামী জঙ্গীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা নিয়েই তিনি খবর পাঠাতেন। পশ্চিমা গণমাধ্যমে সিরিয়া যুদ্ধে জড়িত বিদেশীদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল তার কাজ। পরে তিনি বুঝতে পারেন যে, তাদের কাছে খবর শুধু নির্ভেজাল খবর নয়Ñ তারমধ্যে যুদ্ধের কর্কশ, নির্মম রূপ ও জঙ্গী যোদ্ধাদের বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশই মুখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে। এরপর তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে খবর পাঠানো শুরু করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, নিষ্ঠুর এক নায়ক ও স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধÑ ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ এবং বিশ্ব তার বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। কথা বলার সময় হঠাৎ করেই দেখা গেল ইসলামি জঙ্গীবাহী গাড়ির ওপর একটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ল। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িটিকে একটি ধাতব পি- ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছিল না সশস্ত্র জঙ্গীর মৃত্যু হয়েছিল তাৎক্ষণিকভাবেই এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। ডেরেল অর্থাৎ আব্দুল করিম বিলাল ক্ষেপণাস্ত্রের ভগ্নাংশ ভিডিও ক্যামেরায় প্রদর্শন করে বলেন, নিশ্চিতভাবেই এটি একটি মার্কিন ড্রোন হামলা। কিন্তু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে এটি আশপাশের ক্রীড়ারত শিশুদেরও রেহাই দেয়নি। তারা এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে জিহাদী জঙ্গীদের হাত থেকে জান বাঁচানোর জন্য পশ্চিমা সাংবাদিকরা যখন দলে দলে রণক্ষেত্র ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তখন বিলাল আব্দুল করিম গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত যত খবর পাঠিয়েছেন তা এক কথায় অবিস্মরণীয় এবং একজন অকুতোভয় সাহসী সাংবাদিকের অনবধ্য কীর্তি বলা যায়। একই সঙ্গে আব্দুল করিম সিরিয়া যুদ্ধে যোগ দিতে আসা ব্রিটেন, সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিদেশী যোদ্ধাদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। সৌদি আরবের এক প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা যিনি তার ভাষায় ‘বাশার বিরোধী জিহাদে যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি এই যুদ্ধকে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে বলে বর্ণনা করেন এবং সিরীয় শিয়াদের বিরুদ্ধে জিহাদীদের তিনি প্রতিরোধের প্রথম দেয়াল বলে উল্লেখ করেন। সিরীয় যুদ্ধে যোগ দিতে আসা অধিকাংশ জঙ্গী প্রায় অভিন্ন ধারণা পোষণ করে। তাদের ধারণা সাদ্দামের পর ইরাক এখন শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে আছে, তদুপরি ইরানের শিয়া সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি ও সিরিয়ার আসাদ সরকার বৃহত্তম শিয়া শাসিত ভূখ- প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সুন্নি মুসলিমদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। এসব সাক্ষাতকার গ্রহণের ফলে আব্দুল করিমকে জঙ্গী জিহাদীদের প্রচার প্রপাগা-ায় সহায়তাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিরিয়া সরকার এবং তার মিত্র রুশ সরকার বলেছে, করিম সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়েছেন। স্কাইপে দেয়া বেশ কিছু সাক্ষাতকারে আব্দুল করিম বলেছেন, নিউইয়র্কের মাউন্ট ভারননের চার্চে যাওয়া এক ছেলে মধ্যপ্রাচ্যের রণাঙ্গনে সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করবে এটা যেমন কল্পনাতীত ছিল এটাও তেমন কল্পনাতীত যে বেসরকারী নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে তিনি সশস্ত্র জঙ্গী দলের সঙ্গী হবেন। এর চেয়ে তিনি নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবেই বেঁচে থাকতে চান। আব্দুল করিম অকপটে স্বীকার করেন যে, পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠীর কাছে জঙ্গীদের চিন্তা চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার জন্য আল কায়েদাসহ সিরিয়ায় যুদ্ধরত ইসলামী উপদলীয় সদস্যদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। আব্দুল করিম একটি কথা প্রায়ই বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামী জঙ্গীদের সম্পর্কে কোন কিছু জানতে, তাদের কথা শুনতে সরাসরি অনাগ্রহ প্রকাশ করে। অন্যদিকে ইসলামী জঙ্গীরাও আমেরিকাকে ‘চিরশত্রু’ শিবিরে ঠেলে দিয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যে এই দূরত্ব বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করে এটিকে অন্তহীন যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আব্দুল করিমের মতে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনাই কেবল মাত্রা এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। -নিউইয়ক টাইমস
×