ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের পক্ষে জনমত ৪৪ শতাংশ, ওবামার এই সময় ছিল ৮৩, বুশের ৬১ এবং বিল ক্লিনটনের ৬৮ শতাংশ

জনমতের ঘাটতি নিয়েই কাজ শুরু করবেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

জনমতের ঘাটতি নিয়েই কাজ শুরু করবেন ট্রাম্প

জনপ্রিয়তার পাল্লায় পিছিয়ে থেকেই হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আধুনিক কালের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রে আর কোন প্রেসিডেন্টই অভিষেকের সময় এত কম জনপ্রিয় ছিলেন না। যে কোন প্রেসিডেন্টরই হোয়াইট হাউসে প্রবেশের সময় জনপ্রিয়তা সবচেয়ে উর্ধমুখী থাকে পরে ক্রমাম্বয়ে তা নিম্নমুখী হয়। নিউইয়র্ক টাইমস। পূর্বসূরি অনেক প্রেসিডেন্টের তুলনায় কম জনসমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিচ্ছেন ট্রাম্প। জনমতের ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি নিয়েই প্রশাসনের কাজ শুরু করবেন ট্রাম্প। অভিষেকের এক সপ্তাহ আগে গ্যালাপ জরিপে ট্রাম্পের পক্ষে জনমত দেখা গেছে মাত্র ৪৪ শতাংশ। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই সময়টিতে জনসমর্থন ছিল ৮৩ শতাংশ, জর্জ ডব্লিউ বুশ ৬১ শতাংশ এবং বিল ক্লিনটনের ৬৮ শতাংশ। পিউ রিসার্চ জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৯ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের নীতিমালা সমর্থন করে। গ্যালাপ জরিপে আরও দেখা গেছে, ট্রাম্প সামরিক বাহিনী, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সঙ্কট এবং প্রশাসনের বড় ধরনের কেলেঙ্কারি এড়াতে পারবেন কিনা তা এ বিষয়ে ৫০ শতাংশ আমেরিকান আস্থা পোষণ করে। এত কম জনসমর্থন নিয়ে কাজ শুরু করলে ট্রাম্পকে প্রতিটি পদক্ষেপেই খুব সতর্ক হয়ে করতে হবে। কারণ ভুল করার কোন সুযোগ তার থাকবে না বললেই চলে। জনমত জরিপে পিছিয়ে থাকা প্রেসিডেন্টরা সাধারণত সঙ্কটের সময় জনমত নিজের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারেন না। আরেকটি বিষয় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থ্যাংক ইউ ভ্রমণে গিয়ে সমর্থকদের পাশে রাখতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। তিনি তার অভিষেক নিয়ে উদ্বিগ্ন লাখ লাখ আমেরিকানের সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলার চেষ্টা করেন না। এ সময়টিতে তিনি ব্যস্ত ছিলেন টুইটারে ব্যক্তিগত বিরোধ উগড়ে দেয়া নিয়ে, সিএনএন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের সমালোচনা করে এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কথার চেয়ে রাশিয়া আর উইকিলিক্স ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এ্যাসেঞ্জের গুনগান করে। তবে ক্ষমতা নেয়ার পর কাজে দক্ষতা দেখাতে পারলে তার জনসমর্থন করে বেড়ে যেতে সময় লাগবে না। আমেরিকানদের অনেকেই তার এ পদে দায়িত্ব সামাল দেয়ার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সংবাদ জগতের সঙ্গেও তার আছে দ্বন্দ্ব। রাশিয়ার সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় আছেন ট্রাম্প। এ নিয়েও তাকে সমালোচনার ঝড় সামলাতে হচ্ছে। তাইওয়ান নিয়ে কিছুটা মাতামাতি করায় তাকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে চীন। তাইওয়ান ইস্যুতে উস্কানি দিলে শক্ত জবাব দেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে বেজিং। ঘরের পাশে মেক্সিকো হুমকি দিয়ে বলে রেখেছে সীমান্ত কর আরোপ করা হলে তারা এর জবাব দেবে। অন্যদিকে, তার ওপর ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ তো আছেই। সিনিয়র ডেমোক্র্যাট নেতারা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি। দায়িত্ব নিতে চলা যে কোন প্রেসিডেন্টের জন্যই বিষয়গুলো এত বিতর্কিত, এত সঙ্কটজনক যা আগাম রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিতবাহী বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণভাবে এত হট্টগোলের মধ্যে যে কোন রাজনীতিবিদের মুষড়ে পড়ার কথা। কিন্তু ট্রাম্প কোনকিছুর তোয়াক্কা না করেই দিব্যি আছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্সির দুই শতাব্দী ধরে যে রীতি চলে আসছে ট্রাম্প সেটি ওলট-পালট করে দেবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তার শাসন চালানোর সক্ষমতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছেন তাদের দিকে নজর দেয়ারও যেন তার সময় নেই। মার্কিন ইতিহাসবিদ টিমোথি নাফটালি বলেছেন ট্রাম্প একজন নেতা হিসেবে সফল হবেন কিনা তা কেবল সময়ই বলতে পারে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ট্রাম্প প্রায়শ পৃথক নিয়ম-কানুন নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু ইতিহাস তা করবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সাফল্যের নিয়মগুলো বদলায়নি। এখনও সফলতার চাবিকাঠি হচ্ছে জনমত, বিল পাস হওয়া, বিশ্বব্যাপী আস্থা অর্জন, দেশে আস্থা গড়ে তোলা, অর্থনীতি মজবুত হওয়া। এগুলো সব একই আছে। ট্রাম্প নতুন ধারার প্রেসিডেন্ট হতে চান। প্রতিটি প্রেসিডেন্টের সেটি করার অধিকার আছে। তবে তিনি যতই নতুন পথে হাঁটুন পুরনো মানদ-ের নিরিখেই মানুষ তাকে যাচাই করবে।’
×