ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কিউবান বিপ্লবীর আচরণে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ক্ষুব্ধ ও বিব্রত

মার্কিন বিরোধিতার প্রতীক ক্যাস্ট্রো

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

মার্কিন বিরোধিতার প্রতীক ক্যাস্ট্রো

শ্মশ্রুম-িত ৩২ বছরের জি ফিদেল ক্যাস্ট্রো এবং বিদ্রোহীদের এক ক্ষুদ্র দল ১৯৫৯ সালে কিউবায় এক জনসমর্থনহীন একনায়ককে উৎখাত করে রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় তাদের জীপ ও ট্যাংক বহর চালিয়ে যায়। ফুলজেন্সিও বাতিস্তার নির্মম একনায়কতন্ত্রে অতিষ্ঠ হাজার হাজার কিউবান ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বাধীন বিপ্লবীবাদের প্রতি অভিনন্দন জানায়। তারা ক্যাস্ট্রোর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতনের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। খবর গার্ডিয়ান ও এএফপির। এভাবে অর্ধ শতকেরও বেশি সময় আগে ক্যাস্ট্রোর গেরিলা বাহিনী মার্কিন সমর্থিত বাতিস্তার দুর্নীতিগ্রস্ত একনায়কতন্ত্রের স্থলে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে। ক্যাস্ট্রো ৪৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যারিশমা ও ইস্পাতকঠিন ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কিউবা শাসন করেন। তিনি সেখানে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ঠা-ার লড়াইয়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা ক্যাস্ট্রোকে এক বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। কিন্তু তিনি বিশ্বজুড়ে অনেক বামপন্থী, বিশেষত লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীদের প্রশংসাভাজন হন। তিনি কিউবাকে ধনী আমেরিকানদের খেলার মাঠ থেকে ওয়াশিংটনবিরোধী প্রতিরোধের এক প্রতীকে পরিণত করেন। তিনি ১১ জন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের শাসনামল পার করেন। তাদের প্রত্যেকেই তার ১৯৫৯ সালের বিপ্লবের পর কয়েক দশক ধরে তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে যান। এ বিপ্লব কিউবার ওপর ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়েছিল। তিনি ১৯৬১ সালে বে অব পিগসে সিআইএ সমর্থিত প্রবাসী কিউবানদের আক্রমণ এবং অসংখ্য হত্যার চেষ্টা প্রতিহত করেন। কিউবা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৬০-এর ৮ মে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। তিনি তার দেশের অনেক দুর্দশার জন্য আমেরিকার প্রভাবকেই দীর্ঘদিন ধরে দোষারোপ এবং পশ্চিম গোলার্ধের রাজনীতিতে মার্কিন ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এসেছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতা দ্রুত জোরদার করেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবাকে বড় অংকের ভর্তুকি পাঠাতে শুরু করে। এরূপ করতে গিয়ে ক্যাস্ট্রো বৈরী মার্কিন নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেন। এ নীতিতে বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চাওয়া হয়। এ অবরোধ ১৯৬২ সালে শুরু হয় এবং তা তার জীবনব্যাপী বলবৎ থাকে। ১৯৬২ সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট দেখা দিলে বিশ্বে পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মাত্র ৯০ মাইল দূরে কিউবা দ্বীপে পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে চাইলে ওই সঙ্কট দেখা দেয়। অবশেষে মস্কো ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিউবান ভূখ- থেকে দূরে রাখতে রাজি হলে বিশ্বে স্বস্তি ফিরে আসে। ঠা-া লড়াই যখন চরমে, তখন ক্যাস্ট্রো এক কমিউনিস্ট বীর হিসেবে বিশ্বমঞ্চে বিচরণ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে এ্যাঙ্গোলায় সোভিয়েত সমর্থিত সৈন্যদের সহায়তা ১৫ হাজার সৈন্য এবং ১৯৭৭ সালে ইথিওপিয়াতেও সৈন্য পাঠান। কিউবার মার্কিন প্রতিরোধী নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ, বিব্রত ও আশঙ্কাগ্রস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ সত্ত্বেও ক্যাস্ট্রো ক্ষমতায় টিকে যাওয়ায় ওয়াশিংটন হতাশ হয়। এ অবরোধ কিউবায় বিপ্লব উস্কে দেবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশা করেছিল। ১৯৬০-এর দশকে ক্যাস্ট্রোকে হত্যা করতে সিআইএ ও ক্যাস্ট্রোবিরোধী প্রবাসী কিউবানদের অসংখ্য চেষ্টার মুখেও তিনি বেঁচে থাকেন। কিভাবে এসব চেষ্টা এমনকি তার সিগারে বিস্ফোরক মেশানোর ষড়যন্ত্র ও সফল হতে পারেনি, তা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আনন্দবোধ করতেন। তিনি ২০০২ সালে বলেন, আমি কখনও মৃত্যুর ভয়ে ভীত হইনি। মৃত্যু নিয়ে আমি কখনও উদ্বিগ্ন হইনি। ক্যাস্ট্রো ১৯২৬-এর ১৩ আগস্ট এক স্প্যানিশ অভিবাসী ভূমি মালিক ও এক কিউবার মায়ের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তরুণ বয়সে ফুলগেনসিও বাতিস্তার মার্কিন সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা বাহিনী গঠন করেন। বাতিস্তা ১৯৫২ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। এ কারণে ক্যাস্ট্রোর দু’বছরের কারাদ- হয়। পরে তিনি এক বিদ্রোহের বীজ বপন করতে দেশান্তরী হন। ১৯৫৬ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি ও তার অনুসারী দল গ্রানমা জাহাজে করে কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবতরণ করলে, এ বিদ্রোহের সূচনা হয়। ২৫ মাস পর অজস্র প্রতিকূলতার মুখে তারা বাতিস্তাকে উৎখাত করেন। ক্যাস্ট্রোকে কিউবার প্রধানমন্ত্রী বলে ঘোষণা করা হয়।
×