ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থী ফেরত নেবে তুরস্ক

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ মার্চ ২০১৬

শরণার্থী ফেরত নেবে তুরস্ক

শরণার্থী সমস্যা সমাধানে তুরস্ক ও ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ কাছাকাছি এসেছে। যদিও এর চূড়ান্ত রূপরেখা ঠিক করতে আরও সময় লাগবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল মঙ্গলবার ব্রাসেলসে তুরস্কের দেয়া প্রস্তাবকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছেন। এ মাসের ১৭-১৮ তারিখ আঙ্কারার সঙ্গে নেতৃবৃন্দের পরবর্তী বৈঠকে সমঝোতাটি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে কঠিন শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। তাঁরা সোমবার ব্রাসেলসে শীর্ষ বৈঠকে বসেন। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু প্রস্তাব করেছেন প্রতি একজন সিরীয় শরণার্থীকে ইউরোপে আশ্রয় দেয়ার বিনিময়ে তুরস্কও একজন শরণার্থীকে ফেরত নেবে। এ নিয়ে ব্রাসেলসে ১২ ঘণ্টা আলোচনার পর মেরকেল একে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেন। এ বৈঠকে তুরস্কের দেয়া ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ অর্থাৎ একজন বিদায় হলে শূন্য জায়গায় আরেকজনকে নেয়ার নীতিকে মেরকেল স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সমঝোতা চূড়ান্ত হতে সময় দরকার হবে। অভিবাসীরা আশ্রয় পাবার যোগ্য নয়, এ রকম কয়েক হাজার শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর জন্য শীর্ষ বৈঠকে তুরস্কের প্রতি ২৮টি ইইউ দেশ আহ্বান জানাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রায় একই রকম মন্তব্য এসেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছ থেকেও। তিনি বলেছেন, ‘শীঘ্রই এমন দিন আসছে যখন ইজিয়ান সাগর হয়ে গ্রীসে আসা সব শরণার্থীকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এটি করা সম্ভব হলে অবৈধ পথে মানব পাচারকারীদের ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হবে।’ এর আগে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক গত সপ্তাহে বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান তাকে বলেছেন, তুর্কি জলসীমায় আটক সকল অভিবাসীকে ফেরত নিতে তিনি প্রস্তুত আছেন। প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি শরণার্থী তুরস্ক থেকে গ্রিসে আসছে। লক্ষ্য ইউরোপে ঢোকা। মঙ্গলবার বৈঠক শেষে টাস্ক মন্তব্য করেন, ‘অবৈধপথে ইউরোপে প্রবেশের দিন শেষ হতে চলেছে’। তুরস্ক থেকে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা শুরু করে গ্রিস ইউরোপ পৌঁছানোর যে একটি প্রবণতা শরণার্থীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে সেটি বন্ধ করতে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এখন বদ্ধপরিকর। বেশিরভাগ শরণার্থী আসছে সিরিয়া ও ইরাক থেকে। রবিবার ভূমধ্যসাগরে শরণার্থী বোঝাই একটি নৌকা উল্টে গিয়ে ২৫ অভিবাসন প্রত্যাশীর সলিল সমাধি ঘটে। এরই প্রেক্ষাপটে ইইউ নেতৃবৃন্দ সঙ্কট সমাধানে বৈঠকে বসেন। শরণার্থী ইস্যুতে ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অবশ্য মতপার্থক্য রয়েছে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো বলেছে, অভিবাসন প্রত্যাশীদের গ্রিস থেকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো অবৈধ। কিন্তু ইইউ এখন শরণার্র্থীর ঢল আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তুরস্ক ইতোমধ্যেই ৩০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। শরণার্থীদের পুনর্বাসন ও তাদের আগমন স্রোত ঠেকাতে তুরস্ককে ৩শ’ কোটি ইউরো (৩৩০ কোটি ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইইউ। গত বছর ১০ লাখের বেশি শরণার্থী সাগরপথে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। শরণার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করলে প্রায় ১৩ হাজার শরণার্থী মেসিডোনিয়া সংলগ্ন গ্রীস সীমান্তে আটকা পড়ে। তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এ বৈঠক এমন এক সময় হচ্ছে যখন সময়টি ঠিক আঙ্কারার অনুকূলে নেই। জামান নামে বিরোধী দল সমর্থক একটি পত্রিকা তুর্কি সরকার নিজ মালিকানায় নিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ইইউর সঙ্গে সম্পর্কে তুরস্ক কিছু বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।
×