
ছবি: প্রতীকী
দূষণের ভয়াবহ চাপে নুইয়ে পড়ছে বড় বড় শহরের বাতাস। ঢাকা, দিল্লি, বেইজিং, মুম্বাই কিংবা এমনকি খারাপ দিনে নিউইয়র্কের বাসিন্দারাও প্রতিদিনই শ্বাস নিচ্ছেন ধোঁয়া, ধূলিকণা ও বিষাক্ত গ্যাসে ভরপুর বাতাসে। এতে শুধু শ্বাসকষ্ট নয়, বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের জটিলতাও।
এই অবস্থায় শহর ছেড়ে পাহাড়ে চলে যাওয়া হয়তো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, কিছু ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত গ্রহণ করলে ফুসফুসের প্রতিরোধক্ষমতা কিছুটা হলেও বাড়ানো সম্ভব।
চলুন জেনে নিই দূষিত শহরের বাসিন্দাদের জন্য কোন সাপ্লিমেন্টগুলো ফুসফুসের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী—
ভিটামিন সি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের শক্তিশালী হাতিয়ার
সাধারণ ঠান্ডা সেরে দেওয়ার গুণেই বেশি পরিচিত ভিটামিন সি আসলে দূষণ-সৃষ্ট ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খুবই কার্যকর। দূষিত বাতাসে বসবাসকারীদের রক্তে ভিটামিন সি-র মাত্রা তুলনামূলক কম পাওয়া যায়। নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণে ফুসফুসের টিস্যু মজবুত হয় এবং শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ কমে।
পরামর্শ: ভিটামিন ই’র সঙ্গে মিলে এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দ্বিগুণ ঢাল তৈরি করে।
ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ফুসফুসের প্রদাহ কমায়
ফিশ অয়েল বা শৈবাল নির্যাস থেকে তৈরি ওমেগা–৩ সাপ্লিমেন্ট ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এতে শ্বাসনালির ফোলা ভাব কমে, নিঃশ্বাস নেওয়া সহজ হয় এবং হাঁপানির মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পাশাপাশি এটি হৃদয় ও মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী।
ম্যাগনেসিয়াম: শ্বাসপ্রশ্বাসে স্বাচ্ছন্দ্য আনে
ম্যাগনেসিয়াম পেশির শিথিলতায় সাহায্য করে, যার মধ্যে রয়েছে শ্বাসনালির চারপাশের পেশিগুলিও। যারা দূষিত শহরে থাকেন এবং প্রায়ই শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিতে ভোগেন, তাদের জন্য ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট দারুণ উপকারী হতে পারে।
কুয়েরসেটিন: প্রকৃতির নিঃশব্দ রক্ষাকবচ
আপেল, পেঁয়াজ ও বেরিতে থাকা এই ফ্ল্যাভোনয়েড সাপ্লিমেন্ট আকারে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন। এটি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমায়, ফুসফুসের টিস্যুর প্রদাহ কমায় এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস রোগীদের উপশমে সহায়ক।
ভিটামিন ডি: শ্বাসযন্ত্রের প্রতিরোধক
করোনাকালের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই জেনেছেন ভিটামিন ডি কতটা জরুরি। দূষিত শহরে সূর্যের আলো এড়িয়ে চলার কারণে অনেকেই এর অভাবে ভোগেন। ফলে বাড়ে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও দুর্বলতা। নিয়মিত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
ফুসফুস সুরক্ষায় কিছু বাড়তি পরামর্শ:
- ঘরে HEPA ফিল্টারযুক্ত এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন
- পিস লিলি, মানিপ্লান্ট বা স্নেক প্ল্যান্টের মতো ইনডোর গাছ লাগান
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন, এতে শ্লেষ্মা পাতলা হয়
- দূষণের দিনে ইউক্যালিপটাস অয়েল দিয়ে স্টিম নিন
- AQI (Air Quality Index) বেড়ে গেলে বাইরে গেলে N95 মাস্ক ব্যবহার করুন
দূষণের শহরে থেকেও ফুসফুস সুস্থ রাখা সম্ভব—প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক যত্ন। ওমেগা–৩, ভিটামিন সি বা ম্যাগনেসিয়ামের মতো সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরের ভেতর থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। তবে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, সুস্থ শ্বাসপ্রশ্বাস মানেই সুস্থ জীবন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব