
দেশের সর্বত্রই সহজলভ্য এক ফল পেয়ারা। সাধারণত বর্ষা ও শীতকালে প্রচুর পরিমাণে বাজারে পাওয়া গেলেও সারা বছরই কমবেশি এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলটি শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যগুণেও অনন্য। এর বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava, যা মাইরটাস গোত্রের অন্তর্গত। পেয়ারা বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় অঞ্চল—ভারত, পাকিস্তানেও দারুণ জনপ্রিয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিন মাত্র একটি পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাসই বদলে দিতে পারে শরীরের অভ্যন্তরীণ গঠন। এতে থাকা ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও বিভিন্ন মিনারেল শরীরকে রাখে রোগমুক্ত ও সতেজ।
চলুন জেনে নিই, পেয়ারার অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা:
সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়:
পেয়ারার প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরে প্রবেশের পরপরই ক্ষতিকর জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে। ফলে শরীরের অভ্যন্তরে জমে থাকা টক্সিন বেরিয়ে যায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:
পেয়ারা খাওয়ার মাধ্যমে দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়ে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপজনিত ঝুঁকি কমাতে এটি বিশেষভাবে কার্যকর।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে:
ভিটামিন এ–সমৃদ্ধ পেয়ারা নিয়মিত খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ছানি, গ্লকোমা ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো চক্ষুরোগ থেকেও রক্ষা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
পেয়ারায় থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। ফলে সহজে ঠান্ডা-জ্বর বা অন্যান্য সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
বুদ্ধিমত্তা ও মনোযোগে সহায়ক:
ভিটামিন বি৩ ও বি৬ সমৃদ্ধ পেয়ারা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে। ফলে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি ও মনোযোগে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক:
পেয়ারা দেহের ক্ষতিকর উপাদান দূর করে। এতে থাকা লাইকোপেন, কুয়েরসেটিন ও পলিফেনলস ক্যান্সার সেল গঠনে বাধা দেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনে কার্যকর:
পেয়ারা ফাইবারে ভরপুর, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং কনস্টিপেশনের সমস্যা কমায়।
রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে:
গ্লাইকেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় পেয়ারা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে দেয় না।
হার্ট ভালো রাখে:
পেয়ারা ক্ষতিকর কোলেস্টরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করে:
পেয়ারা খাওয়ার পাশাপাশি এর খোসা ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে তৈরি প্যাক মুখে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক হয় ঝকঝকে ও উজ্জ্বল।
পেয়ারা কাঁচা বা পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। অনেকে লবণ-মরিচ মিশিয়ে খেতে পছন্দ করেন, কেউবা আবার জ্যাম-জেলি তৈরি করেও উপভোগ করেন।
পরিশেষে বলা যায়, এই ছোট্ট ফলটির গুণাগুণ এতটাই বিস্ময়কর যে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেয়ারা থাকা উচিত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মিমিয়া