ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

এক ফোঁটা রক্তেই জানা যাবে আপনার বয়স ও ভবিষ্যৎ! বিজ্ঞানীদের চমকপ্রদ আবিষ্কার

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৫:৫১, ১৫ জুন ২০২৫

এক ফোঁটা রক্তেই জানা যাবে আপনার বয়স ও ভবিষ্যৎ! বিজ্ঞানীদের চমকপ্রদ আবিষ্কার

ছবি: সংগৃহীত

এটা শুনলে যেন কোনো সাই-ফাই সিনেমার কাহিনি মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে, মার্কিন ও ফরাসি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, তারা এমন এক সহজ রক্ত বা লালা-ভিত্তিক পরীক্ষা আবিষ্কার করেছেন যা বলে দিতে পারে একজন মানুষের শরীরের প্রকৃত বয়স এবং তিনি কতদিন বাঁচতে পারেন তার সম্ভাব্য হিসাব।

এই পরীক্ষাটি নির্ভর করছে একটি বৈজ্ঞানিক ধারণার ওপর, যাকে বলা হয় ইনট্রিনসিক ক্যাপাসিটি (Intrinsic Capacity বা IC)—মানে এমন এক সামগ্রিক ক্ষমতা, যা একজন ব্যক্তি তার দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করেন। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চলাফেরা, চিন্তাশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ, স্মৃতিশক্তি এবং মানসিক সুস্থতা।

এতদিন এই IC নির্ধারণ করা ছিল সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও জটিল একটি প্রক্রিয়া। তবে নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, এখন রক্ত বা লালারস থেকে ডিএনএ মিথাইলেশন (DNA Methylation) প্যাটার্ন দেখে সহজেই বোঝা যাবে কোনো ব্যক্তির জৈবিক বয়স।

বিশ্বজুড়ে ১০ বছরের গবেষণায় ২০ থেকে ১০২ বছর বয়সী এক হাজারের বেশি মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা IC স্কোর তৈরি করেছেন, যা নির্ধারিত হয়েছে পাঁচটি বয়স-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেচিন্তাশক্তি, চলাচল, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা, প্রাণশক্তি এবং মানসিক সুস্থতা।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের IC স্কোর বেশি, তারা গড়ে ৫.৫ বছর বেশি বেঁচে থাকেন। এমন ব্যক্তিদের ফুসফুসের কার্যকারিতা ভালো, হাঁটার গতি দ্রুত, হাড় মজবুত এবং নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক।

অন্যদিকে, যাদের IC কম, তাদের বয়সজনিত রোগ যেমন হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।

RUSH Institute for Healthy Aging-এর অধ্যাপক টমাস হোল্যান্ড, যিনি গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, তিনি এই আবিষ্কারকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি সাধারণ রক্ত বা লালা পরীক্ষা দিয়ে যদি কারও বয়স এবং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, তাহলে তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য বড় এক অগ্রগতি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরীক্ষা শুধু আপনার বর্তমান শারীরিক অবস্থা নয়, বরং ভবিষ্যতের দিকও ইঙ্গিত দিতে পারে। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য হস্তক্ষেপ আগে থেকেই পরিকল্পনা করা সম্ভব।’

গবেষণায় খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব নিয়েও জরিপ চালানো হয়। দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সামন, ম্যাকারেল, সারডিন, ব্লুফিশ ও সোর্ডফিশ জাতীয় চর্বিযুক্ত মাছ খান এবং চিনি খাওয়ার পরিমাণ কম রাখেন, তাদের IC স্কোর তুলনামূলকভাবে বেশি।

গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘চর্বিযুক্ত মাছ ও গাঢ় রঙের মাংস গ্রহণকারী এবং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট কম গ্রহণকারী ব্যক্তিদের IC বেশি। এছাড়া চিনির পরিমাণ সীমায় রাখলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।’

লন্ডনের রিজেনারেটিভ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্লাস্টিক সার্জন ড. টুনচ তিরিয়াকি বলেন, ‘চর্বিযুক্ত মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ প্রতিরোধে কার্যকর এবং স্নায়ু সুরক্ষায় সহায়ক। অন্যদিকে, অতিরিক্ত চিনি শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ বাড়ায়যা শরীরের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, শারীরিকভাবে তরতাজা থাকতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম যেমন দৌড়ানো, হাঁটা এবং ওজন বহনকারী ব্যায়াম প্রয়োজন। এছাড়াও সামাজিক মেলামেশা এবং মস্তিষ্কচর্চাও বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

 

সূত্র: ডেইলি মেইল।

রাকিব

×