ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

২০২৫ সালে বিমান দুর্ঘটনার ঊর্ধ্বগতি: ভয়ঙ্কর সংকেত? বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৫:১৭, ১৫ জুন ২০২৫

২০২৫ সালে বিমান দুর্ঘটনার ঊর্ধ্বগতি: ভয়ঙ্কর সংকেত? বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২৬০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এটি ২০২৫ সালের বিমান দুর্ঘটনার তালিকায় সর্বশেষ একটি মর্মান্তিক ঘটনা।

বছরের শুরুতে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ওয়াশিংটনে এক সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬৭ জন নিহত হয়েছিলেন। মার্চ মাসে রুয়াতান দ্বীপের কাছে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে আরও একটি বিধ্বস্ত দুর্ঘটনায়। এই ধরণের বড় বড় দুর্ঘটনার ফলে ২০২৫ সাল বিমান চলাচলের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গত দশকের মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বছর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ বছর ইতিমধ্যে ছয় মাসের মধ্যে বিমানের দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৪৬০ ছাড়িয়ে গেছে। জার্মানির বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষক সংস্থা জ্যাকডেকের প্রতিষ্ঠাতা জান-আরওয়েড রিখটার বলেছেন, ‘এ বছর এখনও ছয় মাস বাকি, তাই এই হার যদি বজায় থাকে তাহলে চিন্তার বিষয় হতে পারে।’

তবে বিমান চলাচল খাতের বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করেছেন, বিমানযাত্রা মোটের ওপর এখনও নিরাপদই থেকে যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অফ লেস্টারের সিভিল সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিটের পরিচালক ড. সায়মন বেনেট বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এই অনুভূতি আসা স্বাভাবিক, কারণ একটি নির্দিষ্ট সময়ের চিত্র দেখে মনে হতে পারে ঝুঁকি বাড়ছে বা কমছে।’

২০২৩ সাল ছিল বিমান চলাচলের ইতিহাসের অন্যতম নিরাপদ বছর, যেখানে গ্লোবাল এভিয়েশন দুর্ঘটনার সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া কয়েকটি মারাত্মক দুর্ঘটনা জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে সামগ্রিক পরিসংখ্যানে এটি বিপরীত প্রমাণিত হচ্ছে।

ব্রিটিশ এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ ২০২৪ সালের বার্ষিক নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রকাশ করে উল্লেখ করেছে, ‘বাণিজ্যিক বিমান চলাচল এখনো সর্বাপেক্ষা নিরাপদ পরিবহন মাধ্যম, এবং দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে দুর্ঘটনার হার কমছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বড় বড় দুর্ঘটনার কারণে মাঝেমধ্যে গড় হার বাড়লেও ২০ বছরের গড় পরিসরে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ড. বেনেট আরও বলেন, ‘৫ মাইল উপরে আকাশে যাতায়াত করা বাড়ির থেকে অনেক বেশি নিরাপদ, কিন্তু জনসাধারণকে এটা বোঝানো খুবই কঠিন।’

অর্থনৈতিক মন্দা বিমান চলাচল শিল্পে বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়, যা নিরাপত্তার খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে তারা উল্লেখ করেন।

এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট-এর বিধ্বস্ত হওয়ার সঠিক কারণ জানতে তদন্ত চলছে, তবে প্রাথমিক ধারণা মতে পরিবেশগত কারণ এবং যান্ত্রিক ত্রুটি একসঙ্গে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটির অ্যারোডাইনামিক্স গবেষক ড. স্যামি ডায়াসিনোস বলেছেন, ‘বয়িং ৭৮৭-র ইঞ্জিন অত্যন্ত শক্তিশালী, একটি ইঞ্জিন ফেলিওর হলেও বিমান পরিচালনা করা সম্ভব। তাই একসঙ্গে দুই ইঞ্জিনের সমস্যা খুবই বিরল। সম্ভবত পরিবেশগত কারণ বেশি প্রভাব ফেলেছে।’

রানওয়ের তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বিমানকে আরো বেশি লিফ্ট নিতে বাধ্য করত। এছাড়া বিমান ৬০০ ফুট উচ্চতায় থাকাকালে ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো এবং ফ্ল্যাপ ফিরিয়ে নেওয়া অবস্থায় ছিল, যা লিফ্ট কমিয়ে দেয় এবং দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এডিথ কনোয়ে ইউনিভার্সিটির অ্যাভিয়েশন লেকচারার মারে টেরওয়ে বলেন, ‘কোনো কোনো সময় পাইলট ফ্ল্যাপের পরিবর্তে ভুল করে গিয়ার ফিরিয়ে নেওয়ায় লিফ্ট কমে যায়, যা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে।’

 

সূত্র: ডেইলি মেইল।

 

রাকিব

×