
ছবিঃ সংগৃহীত
সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত-পা জড় হয়ে আছে, আঙুলগুলো ফুলে গেছে, ব্যথায় মোচড় দিচ্ছে গাঁট – এমন সমস্যায় ভুগছেন? এমন হলে এটি হতে পারে রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস (Rheumatoid Arthritis) নামক এক ধরনের প্রদাহজনিত জয়েন্ট রোগ। এই অসুখে শরীরের ছোট-বড় নানা জয়েন্টে ধীরে ধীরে ইনফ্লামেশন তৈরি হয় এবং সময়ের সঙ্গে হাড় ক্ষয় হতে থাকে।
সম্প্রতি এই রোগ সম্পর্কে জানাতে একটি সচেতনতামূলক বক্তব্যে ইন্টারভেনশনাল পেইন ফিজিশিয়ান ডা. ঋতুপর্ণা দাস জানান, “রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস মূলত এক ধরনের অটোইমিউন ডিজিজ। এতে শরীর নিজেরই জয়েন্টকে শত্রু মনে করে আক্রমণ শুরু করে দেয়। ফলে জয়েন্ট ফুলে যায়, গরম হয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে।”
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
এই রোগে নারী রোগীদের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যেই এই রোগের সক্রিয়তা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে পুরুষদের মধ্যেও এই রোগ হতে পারে।
এছাড়া যাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ আগে রিউমাটয়েড আর্থরাইটিসে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
কোন উপসর্গ দেখে সন্দেহ করবেন?
-
সকালে উঠেই হাত-পায়ে ঝিমঝিম ভাব ও জয়েন্টে ব্যথা
-
আঙুল বা কবজির জয়েন্টে ফোলা ভাব ও লালচে রঙ
-
আংটি বা চুড়ি টাইট লাগা
-
হাটু বা পায়ের জয়েন্টে অস্বাভাবিক ব্যথা
-
জয়েন্টে স্নায়বিক অস্বস্তি ও নড়াচড়ায় কষ্ট
কীভাবে নির্ণয় করা যায়?
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় সম্ভব। যেমন:
-
Rheumatoid Factor (RF)
-
Anti-CCP (Cyclic Citrullinated Peptide Antibody)
তবে এই টেস্টগুলো নেগেটিভ হলেও রোগটি থাকতে পারে, একে বলা হয় Seronegative Rheumatoid Arthritis।
চিকিৎসা কী?
প্রাথমিকভাবে ব্যথা কমাতে NSAID গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ওষুধ খেলে কিডনি ও পাকস্থলির ক্ষতি হতে পারে।
বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে:
-
DMARDs (Disease-Modifying Anti-Rheumatic Drugs) যেমন Methotrexate, Sulfasalazine
-
JAK Inhibitors
-
Monoclonal Antibodies (তবে এ চিকিৎসা তুলনামূলক ব্যয়বহুল)
ডা. ঋতুপর্ণা দাসের মতে, “এই রোগ যত দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা যায়, তত দ্রুত হাড় ক্ষয় এবং জয়েন্টের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব। এমনকি পেশেন্টকে একটি স্বাভাবিক জীবনেও ফিরিয়ে আনা যায়।”
সতর্কতা:
জয়েন্টে ব্যথা হলেই ওষুধের দোকানে গিয়ে ব্যথার ওষুধ কিনে খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শেষ কথা:
প্রতিদিনকার ব্যস্ত জীবনে গাঁটে ব্যথা হালকা ভেবে উপেক্ষা করবেন না। কারণ এটি হতে পারে ভবিষ্যতের বড় বিপদের ইঙ্গিত। সচেতন হোন, আগেভাগে চিকিৎসা শুরু করুন।
ইমরান