ছবি: সংগৃহীত
লিভার ও কিডনি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্স মেশিন। তারা সারাক্ষণ কাজ করে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, পুষ্টি প্রক্রিয়াজাত করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পানিশূন্যতা ও অনিয়মিত অভ্যাসের কারণে ধীরে ধীরে এই অঙ্গদ্বয় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বড় কোনো সমস্যা হওয়ার আগে যদি প্রতিদিনের জীবনে কিছু ছোট অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তবে তা হতে পারে অনেক কার্যকর। ভালো খবর হলো—প্রতিটি অভ্যাস মাত্র ৫ মিনিট সময় নেবে!
লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে পেটের মাসাজ করুন
হালকা মাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, লিম্ফ্যাটিক ড্রেনেজ উন্নত করে এবং ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে।
যেভাবে করবেন:
– ডান পাশে (লিভারের অংশে) হাতের তালু রেখে হালকা চক্রাকারে ম্যাসাজ করুন ২ মিনিট।
– তারপর ধীরে ধীরে পেছনে নিচের দিকে গিয়ে কিডনি অংশে হালকা চাপ দিন।
– ধীরে ও গভীর শ্বাস নিতে নিতে পুনরায় একইভাবে ম্যাসাজ করুন।
এই পদ্ধতিটি লিভার ও কিডনির জট দূর করতে ও কাজের গতি বাড়াতে সহায়ক।
হালকা গরম পানিতে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে কুলকুচি করুন
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এই ছোট কাজটি লিভার ও কিডনির টক্সিন জমা কমাতে সাহায্য করে। গরম হলুদের পানি মুখে কুলকুচি করলে ভ্যাগাস নার্ভ উদ্দীপিত হয়, যা সরাসরি লিভারের সঙ্গে যুক্ত। এটি হজমশক্তি উন্নত করে, যার প্রভাব পড়ে লিভারের ডিটক্স প্রক্রিয়ায়।
যেভাবে করবেন:
এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চিমটি গুঁড়ো হলুদ মেশান। এরপর ৩০ সেকেন্ড মুখে রেখে কুলকুচি করে ফেলে দিন। এটি গলা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি লিভার ও হজমতন্ত্রকে সক্রিয় করে।
লিভারের ওপর গরম ক্যাস্টর অয়েল প্যাক ব্যবহার করুন
ক্যাস্টর অয়েল একটি প্রাকৃতিক ডিটক্স উপাদান। এটি লিভার ফাংশন উন্নত করে, বাইল প্রবাহ বাড়ায় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
যেভাবে করবেন:
– একটি তুলার কাপড় বা তুলা নিন এবং ঠান্ডা-প্রেস করা ক্যাস্টর অয়েলে ভিজিয়ে নিন।
– এটি পেটের ডান পাশে (লিভার অংশে) রেখে দিন।
– উপরে একটি উষ্ণ তোয়ালে বা হট ওয়াটার ব্যাগ রাখুন এবং ৫ মিনিট রাখুন।
এই অভ্যাস হজমে সমস্যা হলে বা শরীরে বিষাক্ত উপাদান জমলে খুব কার্যকর।
ডিটক্স উদ্দীপনায় অ্যাকুপ্রেশার পয়েন্টে টোকা দিন বা চাপ দিন
লিভার ও কিডনি সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট পয়েন্টে টোকা বা চাপ দিলে অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা ও ডিটক্স ক্ষমতা বাড়ে। রিফ্লেক্সোলজি ও অ্যাকুপাংচারে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
প্রধান দুটি পয়েন্ট:
-
লিভার ৩ (LV3): পায়ের বড় আঙুল ও দ্বিতীয় আঙুলের মাঝখানে। এটি লিভারের শক্তি প্রবাহ বাড়ায় ও হজমে সহায়তা করে।
-
কিডনি ১ (KD1): পায়ের পাতার মাঝামাঝি নিচে। এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় ও ক্লান্তি দূর করে।
প্রতিদিন ১-২ মিনিট করে এই পয়েন্টগুলোতে হালকা ম্যাসাজ করলে শরীরে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, বিষাক্ত পদার্থ কমে ও শক্তি ফিরে আসে।
লিভার ও কিডনি পরিষ্কারে সামান্য মৌরির দানা চিবান
মৌরি শুধু হজমে নয়, লিভার ও কিডনি পরিষ্কারে দারুণ কার্যকর। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করতে সাহায্য করে, গ্যাস-ফোলাভাব কমায় এবং টক্সিন জমা হতে বাধা দেয়।
যেভাবে খাবেন:
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা খাবারের পর আধা চা-চামচ মৌরি চিবিয়ে খান।
– এটি লিভারের বাইল উৎপাদন বাড়ায়
– প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে, কিডনি পরিষ্কার রাখে
– লিভার ও কিডনিকে ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে সুরক্ষা দেয়
আরও উপকারী করতে চাইলে:
রাতে কিছু মৌরি পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন এবং সকালে সেই পানি চায়ে বা আলাদা করে সারা দিন অল্প অল্প করে পান করুন।
আবির
