ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডায়াবেটিসে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে চিরতরে!এই ৫টি উপসর্গ চিনে রাখুন

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ১০ জুন ২০২৫

ডায়াবেটিসে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে চিরতরে!এই ৫টি উপসর্গ চিনে রাখুন

ডায়াবেটিস নামটা যত পরিচিত, এর প্রভাব ততটাই গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি। শুধু রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়ল বলে ভাবলে ভুল হবে। এই নীরব ঘাতক আস্তে আস্তে শরীরের একের পর এক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে থাকে। চোখও তার ব্যতিক্রম নয়।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে চোখের ভেতরের সংবেদনশীল অংশ, বিশেষ করে রেটিনায় এমন সব পরিবর্তন শুরু হয়, যা শুরুতে টের না পেলেও পরে মারাত্মক ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। অনেক সময় সেই ক্ষতি আর ফিরেও আসে না। চলুন, জেনে নিই ডায়াবেটিসে কীভাবে চোখ আক্রান্ত হয় এবং কোন ৫টি চোখের রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত।

১. ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি:শুরুটা নীরবে, শেষটা অন্ধত্বে

ডায়াবেটিসে চোখের সবচেয়ে প্রচলিত এবং বিপজ্জনক রোগ হলো ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। চোখের রেটিনায় থাকা ছোট ছোট রক্তনালিগুলো উচ্চ রক্তশর্করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমে এগুলো ফুলে ওঠে, ফাটে কিংবা বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে দুর্বল নতুন রক্তনালি গজাতে পারে, যেগুলো থেকে রক্তপাত হয় এবং দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করে।

শুরুর দিকে কোনো লক্ষণ না থাকলেও পরে চোখে ঝাপসা দেখা, কালো দাগ পড়া বা চোখের সামনে ছোট ছোট বিন্দু ভেসে বেড়ানো শুরু হয়। চিকিৎসা না হলে একসময় সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যেতে পারে।

২. ডায়াবেটিক ম্যাকুলার ইডিমা:চোখের মাঝখানেই ঝাপসা

ম্যাকুলা হলো রেটিনার একদম কেন্দ্রস্থল, যেটা দিয়ে আমরা পড়তে পারি, মানুষের মুখ চিনতে পারি বা সূক্ষ্ম কিছু দেখতে পারি। ডায়াবেটিসে এখানেই তরল জমতে শুরু করে, যেটাকে বলে ম্যাকুলার ইডিমা।

এর ফলে চোখের মাঝখানটাই সবচেয়ে ঝাপসা হয়ে যায়। অনেকেই বই পড়া, মোবাইল দেখা বা মানুষের মুখ চিনতে হিমশিম খেতে থাকেন। যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয়, তাহলে এই ক্ষতি স্থায়ী হতে পারে। যদিও এখন ইনজেকশন ও লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

৩. ছানি পড়া:ডায়াবেটিসে তাড়াতাড়ি আসে ধোঁয়াশা

ছানি মানেই চোখের লেন্সে কুয়াশার মতো পর্দা পড়া। ডায়াবেটিসে এই ছানি পড়া ঘটে আরও তাড়াতাড়ি এবং অনেক সময় আগেভাগেই চোখ ঝাপসা করে দেয়। রাতে গাড়ি চালাতে সমস্যা, আলোতে চোখে ঝলক, চোখে ধোঁয়াটে ভাব এসব ছানির সাধারণ লক্ষণ।

তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ ছানির অপারেশন এখন খুবই নিরাপদ ও কার্যকর। তবে বিষয়টা হলো, ডায়াবেটিস থাকলে ছানির আশঙ্কা আরও বেশি থাকে এবং আগেই নজর দিতে হয়।

৪. গ্লকোমা:চাপ বাড়ে চোখে, নষ্ট হয় নার্ভ

ডায়াবেটিসের কারণে চোখে গ্লকোমা নামের রোগের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এই রোগে চোখের ভেতরের চাপ বেড়ে যায় এবং যে নার্ভ চোখ থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়, সেটাই আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গ্লকোমা অনেক সময় নিঃশব্দে ঘটে, কোনো লক্ষণ ছাড়াই। চোখের সামনের অংশে নতুন রক্তনালি গজাতে পারে, যা চোখের তরল বের হওয়ার পথ আটকে দেয়। ফলে চোখে চাপ বাড়ে, দৃষ্টি কমে যায়, আর শেষমেশ চোখের আলো নিভে যেতে পারে। তাই নিয়মিত চোখের পরীক্ষা খুব জরুরি।

৫. রেটিনাল ডিটাচমেন্ট:চোখের ভেতরেই ঘটে বিচ্ছেদ

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি যদি অনেক দিন ধরে থাকে, তাহলে চোখের ভেতরে আঁশের মতো টিস্যু জমে যায়। সেই টিস্যু রেটিনাকে টেনে আলাদা করে দেয় চোখের পেছনের দেওয়াল থেকে। এই অবস্থাকে বলে রেটিনাল ডিটাচমেন্ট।

এটা হঠাৎ করেই ঘটে এবং খুব দ্রুত দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা হলে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় নেই। একটু দেরি করলেই সেই দৃষ্টি আর কখনোই ফিরবে না।

কেন ডায়াবেটিসে চোখের ক্ষতি হয় বেশি?

উচ্চ রক্তশর্করার কারণে চোখের রক্তনালিতে ক্ষতি হয় এটা তো জানা কথাই। কিন্তু সঙ্গে যদি থাকে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ধূমপান কিংবা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।

অনেকেই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও শুরুতে কোনো লক্ষণ টের পান না। যখন ধরা পড়ে, তখন চোখের ক্ষতি অনেকটাই হয়ে গিয়েছে।

ডায়াবেটিসের প্রভাব শুধু রক্তে থাকে না, চোখের আলো পর্যন্ত নিভিয়ে দিতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অন্তত বছরে একবার চোখ পরীক্ষা করানো এই অভ্যাসগুলো জীবনভর আপনার দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে পারে। মনে রাখবেন, চোখের ক্ষতি একবার হলে অনেক সময় তা আর ফিরে আসে না। সচেতন থাকুন, চোখের আলো বাঁচান।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/mrx5y8wx

আফরোজা

×