গরুর পায়া বা নেহারিতে ক্যালসিয়াম না চর্বি? জানেন কি এই জনপ্রিয় খাবারটি নিয়ে প্রচলিত ধারণার বেশির ভাগটাই ভুল! আসলেই কি নেহারি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস, নাকি এতে বেশি থাকে ফ্যাট আর অন্য পুষ্টি উপাদান?
বাংলাদেশে জনপ্রিয় এক বিশেষ খাবারের নাম নেহারি। অনেকে মনে করেন, গরুর পা দিয়ে তৈরি এই খাবার ক্যালসিয়ামের দারুণ উৎস। কিন্তু আদৌ কি তাই? চলুন জেনে নিই, বৈজ্ঞানিকভাবে কী বলছে এই খাবার সম্পর্কে।
কী দিয়ে তৈরি হয় নেহারি?
নেহারি তৈরি হয় গরুর পায়ের হাড় ও তাতে থাকা অস্থিমজ্জা (Bone Marrow) দিয়ে। গরুর হাড়ের মাঝে যে নরম, তুলতুলে, স্পঞ্জের মতো অংশ থাকে সেটিই অস্থিমজ্জা নামে পরিচিত। মূলত এই অস্থিমজ্জার স্বাদ ও পুষ্টির জন্যই নেহারিকে জনপ্রিয় একটি রান্না হিসেবে ধরা হয়।
গরুর পায়া বা নলি বা হাড়ের ভিতরে হলুদ যে নরম তুলতুলে অংশটা আমরা নেহারি বা মাংস রান্নায় খুব মজা করে খাওয়ার পর বলি যে ক্যালসিয়াম বা প্রোটিন খাচ্ছি, আসলে এটা পুরোটাই ফ্যাট বা চর্বির দলা। এখানে কোন ক্যালসিয়াম বা প্রোটিন নাই। এটা অতিরিক্ত খেলে রক্তের চর্বি বা কোলেস্টেরল বাড়বে, লিভারে ফ্যাট জমবে।
লাল না হলুদ, কোন অস্থিমজ্জা?
অস্থিমজ্জা সাধারণত দুই ধরনের লাল (Red Marrow) ও হলুদ (Yellow Marrow)। আমাদের দেশে যেসব পূর্ণবয়স্ক গরুর হাড় ব্যবহার করে নেহারি তৈরি হয়, তাতে সাধারণত থাকে হলুদ অস্থিমজ্জা। এই হলুদ অস্থিমজ্জার প্রায় ৮০ শতাংশই থাকে অ্যাডিপোজ টিস্যু দিয়ে ভরা, যা মূলত ফ্যাট সেল বা ট্রাইগ্লিসারাইড সংরক্ষণকারী কোষ।
এই কোষগুলোর কারণেই অস্থিমজ্জা দেখতে হলুদ হয় এবং এগুলোতে থাকে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন কনজুগেটেড লিনোলেইক অ্যাসিড) ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন অলেয়িক অ্যাসিড)। এছাড়া স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন এ, ডি, ই, এবং কে সঞ্চিত থাকে এসব কোষের মধ্যে।
কোলাজেন, জিলাটিন ও পুষ্টিগুণ
গরুর অস্থিমজ্জার আরেকটি মূল উপাদান হলো কোলাজেন, যা এক ধরনের প্রোটিন। সাধারণত টাইপ-১ ও টাইপ-২ কোলাজেন পাওয়া যায় এতে। রান্না করার পর এই কোলাজেন রূপ নেয় জিলাটিনে, যেখানে থাকে নানা রকম অ্যামাইনো অ্যাসিড, যেমন গ্লাইসিন, প্রোলিন, হাইড্রোক্সিপ্রোলিন ও গ্লুটামিক অ্যাসিড। এগুলো হাড়, ত্বক ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুস্থতায় সহায়ক।
তাহলে ক্যালসিয়ামের কী?
অনেকেই ভাবেন, নেহারি খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়। কিন্তু বাস্তব তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর অস্থিমজ্জায় কেবলমাত্র ১৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, যা খুবই কম। তুলনামূলকভাবে দুধ বা চিজে রয়েছে কয়েকগুণ বেশি ক্যালসিয়াম। অর্থাৎ, নেহারি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস নয়।
তাহলে উপকারিতা কী?
যদিও নেহারিতে ক্যালসিয়াম বেশি নেই, তবে এতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড, কোলাজেন, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, গ্লুকোসামিন ও কনড্রয়টিন সালফেট। এগুলো শরীরের জয়েন্ট, ত্বক এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য উপকারী। তবে যেহেতু এতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, তাই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়াই শ্রেয়।
নেহারি ক্যালসিয়ামের উৎস নয়, বরং এটি একটি কোলাজেন ও চর্বি সমৃদ্ধ খাবার। তাই এটি নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে, সঠিক তথ্য জেনে পরিমিতভাবে উপভোগ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অতিরিক্ত না খেয়ে, স্বাস্থ্য ও স্বাদের ভারসাম্য বজায় রেখেই উপভোগ করুন আপনার প্রিয় নেহারি।
আফরোজা
