
বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা
বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম ঘটনা ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম অনুপ্রেরণা জুগিয়ে ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত দেশাত্মবোধক ও উদ্দীপনামূলক গান। পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী বিতাড়িত করার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি যে যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাহস যুগিয়েছে; যুগিয়েছে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালিকে অনুপ্রেরণা এবং হানাদার বাহিনীকে সর্বক্ষণ রেখেছে ভীতসন্ত্রস্ত তা হলো ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’।
আর এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিচালনা করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রচারিত গানগুলো মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা যুগিয়েছে। প্রতিরোধ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এত প্রেরণামূলক গান রচিত হয়েছে যা বিশ্বে বিরল। ৩০ মার্চ বেতারে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি বাজানোর মধ্য দিয়েই ধারণা করা যায় মুক্তি সংগ্রামে দেশাত্মবোধক গানের সূচনা। মুক্তি সংগ্রামের সময় ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিল।
যুদ্ধের সময়ে প্রতিদিন মানুষ অধীর আগ্রহে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শোনার জন্য অপেক্ষা করত। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি এ বেতার কেন্দ্রের সূচনা সংগীত হিসেবে প্রচারিত হতো, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অধিবেশনের শুরু ও শেষ হতো এই গান দিয়ে। স্বাধীন বাংলা বেতারের গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’, ‘সোনা সোনা সোনা’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’, ‘নোঙর তোল তোল সময়’, ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে’, ‘অনেক রক্ত দিয়েছি আমরা’, ‘সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা’, ‘শোনো একটি মুজিব থেকে’ ও ‘বাঁধ ভেঙ্গে দাও।’
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শাহীন সামাদ বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানের গীতিকার সুরকারদের কাছে আমরা অপরিশোধ্য ঋণে ঋণী। তারা অসাধারণ কীর্তি দিয়ে ইতিহাসের উজ্জ্বল স্বাক্ষর হয়ে আছেন। দেশের জন্য জীবনবাজি রাখা সূর্য-সন্তানদের আত্মত্যাগের পাশাপাশি শিল্পীদের রয়েছে সংগ্রামী ও ঐশ্বর্যময় ভূমিকা। দেশাত্মবোধক ও অনুপ্রেরণামূলক গানগুলো ছিল সমগ্র জাতির ঐক্যের বুনিয়াদ।
প্রতিটি গান ছিল সংগ্রামের পথে ও সম্মুখ সমরে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নৈতিক শক্তি। প্রতিটি গান ছিল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। তিনি আরও বলেন, ট্রাকে করে ঘুরে ঘুরে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন ক্যাম্পে গান শুনিয়ে আসতেন আমাদের প্রাণের বন্ধনে আবদ্ধ শিল্পীরা। মুক্তি সংগ্রামের অনুপ্রেরণামূলক গানগুলো আমাদের চূড়ান্ত দেশপ্রেমের নিদর্শন। গানে গানে মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাদের স্বীকৃতি কিন্তু সংগীত শিল্পীরাই প্রথমেই দিয়েছিলেন।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বিদেশী শিল্পীরাও বিভিন্ন কনসার্টে অংশগ্রহণ করে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রই ছিল পুরো মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এখানে বসেই গান লিখে, তৎক্ষণাৎ সুর প্রদান করে গেয়ে গেয়ে প্রচার ছিল যুদ্ধের ভেতর আরেক যুদ্ধ।’