ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী ১১ জুন থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ৬ জুন ২০২৩; আপডেট: ১৮:১৪, ৭ জুন ২০২৩

আগামী ১১ জুন থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি 

শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরিকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে ১১ জুন ২০২৩ থেকে অবিরাম ধর্মঘটসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষ্যে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি  (বিটিএ) সংবাদ সম্মেলন করে।

মঙ্গলবার  (৬ জুন) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ‘মওলানা আকরম খাঁ হল’এক সংবাদ সম্মেলন  এ অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি  (বিটিএ) ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ -এর সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি আলী আসগর হাওলাদার ও বেগম নূরুন্নাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মোঃ সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শাহানা বেগম, অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সদস্য প্রবীর রঞ্জন দাস, আজম আলী খান, মোঃ সোহরাব হোসেন সিকদার, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, ইশরাত জাহান আলো, ওবায়দুর রহমান, সাম্মি আক্তার সুমিসহ প্রমুখ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া বলেন, দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভূক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় এমপিওভূক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ১,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫% উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাই। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষককর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। 

এছাড়াও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়। তাছাড়া সহকারি প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেলপ্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায়সহকারি প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। 

তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পাননি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র ব্যানারে দীর্ঘদিন যাবৎ সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের নিকট দাবিনামা উপস্থাপনহর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকি অনশন, অবস্থান ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালনসহ  প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। 

তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ, গত ১৪ মার্চ ২০১৮ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রায় দুই লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর উপস্থিতিতে মহাসমাবেশ, গত ১৫ মার্চ ২০২২ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণাসহ গত ২৩ মার্চ, ২০২২ সারাদেশে জেলা সদরে ও কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। 

সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে গত ০৮ মার্চ ২০২৩ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ” এর ন্যায়সঙ্গত দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশসহ গত ২০ মার্চ ২০২৩ জাতীয় প্রেসক্লাবের  সানে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ থেকে বাজেটে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের ঘোষণাসহ পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার জন্য  আহবান জানানো হয়। ব্যর্থতায় ১১ জুন ২০২৩ থেকে অবিরাম ধর্মঘট পালনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে জাতীয়করণের ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়নি। বরং বিগত বাজেটের চেয়েও কম বরাদ্দ রখা হয়।

উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমকি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু তনায়া শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এমতাবস্থায় দেশ ও জনগণের স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো-আইএলও’র সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নসহ সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করার জোর দাবি জানান।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র অনুমোদি ১৪৬টি সুপারিশ সম্বলিত শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক সনদের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১১.৯২ শতাংশ অথবা জিডিপি’র ১.৮৩ শতাংশ। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বরাদ্দ কমিয়ে জাতীয় বাজেটের ১১.৫৭ শতাংশ অথবা জিডিপির ১.৭৬ শতাংশ করা হয়েছে। তাই ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সারাজাতি আজ চরমভাবে ক্ষুব্ধ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, রূপপুর পারমানবিক বিদুৎ কেন্দ্র ও মাতার বাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়ন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র পক্ষ থেকেপ্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে হলে দরকার স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। 

এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি  (বিটিএ) মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে নিম্নরূপ কর্মসূচি ঘোষণা করেন:

* ১১ জুন থেকে ১৩ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে “ধর্মঘট” চলবে। 
* ১৩ জুন, ২০২৩ প্রত্যেক জেলা সদরে “মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ” অনুষ্ঠিত হবে।
*  ১৪ জুন থেকে ২০ জুন, ২০২৩ এর মধ্যে জেলায় জেলায় “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ” এর দাবিতে 
“সম্মেলন”। 
* ২৫ জুন, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীকরণ” এর দাবিতে “ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় 
জনপ্রতিনিধি ও মাননীয় সংসদ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় এবং লিফলেট বিতরণ”। 
* ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পাসের পূর্বেই মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলে আগামী 
১১ জুলাই ২০২৩ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমনে লাগাতার “অবস্থান কর্মসূচি” পালন করা হবে।
  

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×